।। উপজেলা প্রতিনিধি।।
ঝড়-বৃষ্টি কিংবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই হঠাৎ করেই ভেঙে পড়ল সাড়ে তিনশ’ বছরের প্রাচীন এক শিমুল গাছ। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মাছাবান্দা হারিশারডারা খালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই গাছটিকে ঘিরে জড়িয়ে আছে নানা রূপকথা, লোককাহিনি আর অলৌকিক বিশ্বাস। গাছটি ভেঙে পড়ার খবর শুনে সোমবার সকাল থেকেই শত শত মানুষ ভিড় জমায় ঘটনাস্থলে। অনেকেই গাছটির পতনে গভীর দুঃখ ও আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাছাবান্দা এলাকার আব্দুল কাদেরের জমিতে বিশালাকার এই শিমুল গাছটি দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। গাছটির সঠিক বয়স কেউ বলতে না পারলেও এলাকার প্রবীণরাও তাদের দাদা-প্রদাদার সময় থেকেই গাছটিকে দেখে আসছেন। গাছটির নিচে কৃষকরা বিশ্রাম নিতেন, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসতেন এর অপরূপ সৌন্দর্য। গাছটির সবুজ পাতার মাঝে লাল শিমুল ফুলের সমারোহ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করত।
গাছটিকে ঘিরে নানা অলৌকিক গল্পও প্রচলিত। স্থানীয় বৃদ্ধা মতিয়ার রহমান (৭০) বলেন, “এই গাছ কেউ কাটতে সাহস পেত না। যারা গাছ কিনতে বা কাটতে আসত, তারা স্বপ্নে সতর্কবার্তা পেত। এমনকি গাছে আঘাত করলে রক্ত বের হওয়ার কথাও শোনা যায়।”
গাছটি কীভাবে ভেঙে পড়ল, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিস্ময় ও কৌতূহল দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী জাহেদা বেগম বলেন, “আমরা শাক তুলতে এসেছিলাম, তখন কোনো বাতাস বা বৃষ্টি ছিল না। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনে দেখি গাছটি মাটিতে পড়ে আছে।” অনেকের ধারণা, গাছের নিচের অংশ পচে যাওয়ায় এটি ভেঙে পড়েছে।
এনজিও কর্মী আমিনুল ইসলাম বীর বলেন, “এই গাছের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের হাজারো স্মৃতি। কৃষকরা এর ছায়ায় বিশ্রাম নিত, পথিকরা এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হত। গাছটি চলে যাওয়ায় আমরা গভীরভাবে ব্যথিত।”
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কুরুনুজ্জামান শাহিন বলেন, “একটি ইতিহাসের সাক্ষী আজ ধ্বংস হয়ে গেল। গাছটি শুধু প্রকৃতির অংশই ছিল না, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও অংশ হয়ে উঠেছিল।”
গাছটির মালিক আব্দুল কাদের বলেন, “গাছটি আমাদের জমির বড় একটি অংশ জুড়ে ছিল। এর সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা মানুষকে আকর্ষণ করত, তাই আমরা কখনো এটি কাটার কথা ভাবিনি।”
প্রাচীন এই শিমুল গাছের পতনে এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গাছটিকে ঘিরে থাকা স্মৃতি, গল্প আর বিশ্বাস এখনও বেঁচে থাকবে মানুষের মুখে মুখে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/এপ্রিল/১৪/২৫