পত্রিকার পাতা আর টিভি খুললেই এখন পাওয়া যায় জঙ্গি সংক্রান্ত খবর। জঙ্গি অপারেশনে জঙ্গিরা ধরা পরছে, বন্দুযুদ্ধে নিহত হচ্ছে। এই জঙ্গিদের ভিরে ধরা পরছে অনেক নিরীহ, সাদা-সিদে ভালো মানুষ। তাদের পরিণতি নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। এমনি এক জঙ্গি সন্দেহে ধরা পরে ইলতুৎমিশ ওরফে ইতু নামের এক বেকার যুবক। পার্কে বসে বিশ্রাম নেয়ার সময় ইতুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি পুলিশের হেফাজতে। এরপর কয়েকদিন নিখোঁজ থাকেন তিনি। একদিকে পরিবারের উৎকণ্ঠা, অন্যদিকে ডিনি অফিসের নানান বন্দির সাথে পরিচয়। চমকপ্রদ নাটকীয়তায় ভরা এই উপন্যাস।
‘সন্দেহভাজন’ উপন্যাসের লেখক আব্দুল খালেক ফারুক পেশায় সাংবাদিক হওয়ায় প্রতিদিন পরিচিত হন পুলিশ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে। যার ফলে পেয়ে যান চমকপ্রদ চরিত্র। যা এই ‘সন্দেহভাজন’ উপন্যাসে সুন্দরভাবে ফুটে তুলেন অত্যন্ত হাস্য রসাত্মকভাবে।
উপন্যাসটি পড়তে পড়তে মনে হবে হুমায়ূন আহমেদের অসাধারণ চরিত্র হিমুর মতোই আব্দুল খালেক ফারুকের সৃষ্টি চরিত্র ইতু। সে সৎ মানুষ খোঁজার মিশনে নামেন বন্ধু ইমরুলের কাছ থেকে এক হাজার টাকা ধার নিয়ে। দশ জন সৎ লোক খুঁজতে গিয়ে ইতু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডিবির হেফাজতে বন্দি হন।
ডিবি কার্যালয়ের একটি কক্ষে শুয়ে যখন ইতু স্বপ্ন দেখে তরী নামে নিয়ে ঠিক সেই সময় কনষ্টেবল জালাল তার ঘুমটা ডেকে নষ্ট করে দেয়। ঠিক সেই তার রুমে নিয়ে আসে এক যুবককে। সে সত্যি সত্যি একজন জঙ্গি।
ডিবি কার্যালয়ে এরপর আনা হয় বাবা (ইয়াবা) মজিদ নামের এক ব্যক্তিকে। বাবা মজিদের সাথে ইতুর সংলাপ-
‘ভাই আপনার নামটা জানতে পারি?’
‘পিতায় নাম দেছে আব্দুল মজিদ। তয় সকলে বাবা মজিদ বইল্যা ডাকে।’
‘বাবা মজিদ। বিষয়টা বুঝলাম না ভাই।’
‘আপনি কই থাকেন? ফিডারে দুধ খাননি? বাবা চেনেন না।’
পুত্রের খোঁজে ইতুর বাবা রইচ উদ্দিন থানায় আসেন। ওসি মুন্সি কুতুব উদ্দিন বিশেষ পাত্তা দেন না তাকে। তবে ইতুর বাবার দুঃখে ব্যথিত হয়ে তিনি এক সময় বলেন, ‘জোয়ান পোলা আর দামরা গরু হারানোর ব্যথা সাংঘাতিক।’
এরপর লেখক তার পূর্ব প্রকাশিত গ্রন্থের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হাজির করেন একের পর এক চরিত্র। বিশেষ করে ঘোড়া ফকিরকে, যার কর্মকান্ড আমাদের সমাজের টাউট ব্যক্তিদের মুখোশ খুলে দেয় পাঠকের সামনে। গল্পের ধারাবাহিতায় লেখক আমাদের হঠাৎ করে পরিচয় করে দেন হলুদ সাংবাদিক কুদ্দুস প্রামাণিকের সাথে। যিনি রাতারাতি সাংবাদিক হয়ে যান। কলমের সাথে পেশি শক্তির ব্যবহার করার আশ^াসে ভুক্তভোগীদের ধোকা দেন। আর জুয়ার আসরে ‘ষ্টাডি’ করতে গিয়ে ধোলাইয়ের শিকার হন। আছেন চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণা করা মীর কাসিম নামের ভন্ড এক রাজনীতিক । তিনিও সন্ধান দিতে পারেননা ইতুর। শেষ পর্যন্ত ডিবির হেফাজত থেকে ইতু মুক্তি পাবে কীনা-তা নিয়ে রুদ্ধশ^াস নাটকীয়তা রয়েছে গল্পে। পাঠকরা হাস্যরসের পাশাপাশি রহস্য গল্পের স্বাদ পাবেন অনায়াসে।
সব মিলে চমকপ্রদ একটি গল্পের সমন্বয়ে বর্তমান পেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে রচিত একটি উপন্যাস ‘সন্দেহভাজন’। বইটি পাঠ করলে পাঠক সামান্য হলেও ইতুর প্রেমে পরে যাবে। চরম বিপদের মুখে সততার প্রদর্শন আজকাল বিরল হলেও ইতুর মতো চরিত্রের ভীষণ প্রয়োজন সমাজে। সম্ভবত এই মেসেজটি পাঠককে দিতে চেয়েছেন লেখক।
লেখক গল্পের ধারাবাহিকতায় সমাজে প্রচলিত যে দূর্নীতিগুলো তুলে এসেছেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এর মধ্যে ভন্ড ফকির, পুলিশ, জঙ্গি, ইয়াবা ব্যবসায়ী, কোর্টের দালাল, অসৎ রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকসহ চারপাশে দেখা নানা চরিত্রের ভিড় রয়েছে। সঠিক বাক্য চয়ন, সাবলীল বর্ণনা, নাটকীয় সংলাপ মন কাড়ে। সব মিলে ‘সন্দেহভাজন’ একটি সম-সাময়িক রোমান্টিক উপন্যাস। যে উপন্যাসটি পড়ে মনেই হয়নি এটা লেখকের প্রথম উপন্যাস।
সন্দেহভাজন
আব্দুল খালেক ফারুক
প্রচ্ছদ:সোহেল আনাম
প্রকাশনীঃ শব্দশৈলী
মূল্যঃ ১৫০ টাকা