তালাত মাহমুদ রুহান:
সংস্কৃতির মাধ্যমেই প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী বিশ্ব দরবারে পরিচিত হয়ে ওঠে। ‘নববর্ষ’ শব্দটির সঙ্গে বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের পরিচয় অনেক পুরনো। এ দেশে বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন খুব ঘটা করেই পালন করা হয়।
বৈশাখ এর প্রথম দিন সারা বাংলাদেশে আনাছে -কানাছে আনন্দের ঢেউ উঠবে। শুভ নববর্ষ কে বরণ করবে নানা আয়োজনের মধ্যো দিয়ে। বৈশাখী উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে এই দিনটিতে । কিছু কিছু গ্রামের মিলিত হয়ে খোলা মাঠে আয়োজন করে বৈশাখী মেলার। এসব মেলায় পাওয়া যায় স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, সব ধরণের হস্তশিল্প এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের খেলনা, মেয়েদের সাজসজ্জার সামগ্রীসহ আরো কতো কিছু।
এছাড়াও রকমারি খাদ্যসামগ্রী, যেমন, চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা ও বিভিন্ন প্রকার মিষ্টির বৈচিত্র্যময় সমারোহ থাকে মেলায়। এছারাও থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত শুটকি ভর্তা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। যেমন নৌকা বাইচ, লাঠি খেলা হাড়িভাঙা কিংবা কলা গাছ বেয়ে উঠা ।
এদিন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ইতিহাস খুঁজতে গেলে, সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে।
এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয় নি।নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখে প্রতিটি মানুষের হালখাতা ও সুন্দর আগামীর কল্যাণের সব পরিকল্পনা ও ভাবনাই অনেক গরুত্বপূর্ণ। যা মানুষের পেছনের দুঃখ-বেদনা ভুলে আগামীর দিনগুলোকে কল্যাণ ও সুখ-শান্তিতে রাঙিয়ে নিতে পারে; নৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সে ভাবনাই সবার একান্ত কাম্য।
অনৈতিক ও বিজাতীয় কর্মকাণ্ডমুক্ত ব্যবসায়িক ও কল্যাণের কাজে বৈশাখ ও হালখাতা উদযাপনে এগিয়ে আসা ইসলাম ও সময়ের দাবি