।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুর উপজেলার তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ বালুচরে যোগাযোগ ও কৃষিপণ্য পরিবহনের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি। রাস্তাঘাট না থাকায় চরাঞ্চলের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ঘোড়ার গাড়িই তাদের প্রধান মাধ্যম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তিস্তা নদী দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে বালুচর জেগে ওঠে। এ সময় চরাঞ্চলের মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহনের জন্য ঘোড়ার গাড়িই হয়ে ওঠে একমাত্র অবলম্বন।
উলিপুর উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। শুকনো মৌসুমে গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্য গোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালাসহ অসংখ্য চরে ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। চরাঞ্চলে যান্ত্রিক যানবাহন না থাকায় আগে মানুষ পায়ে হেঁটে উত্তপ্ত বালু পাড়ি দিত এবং মাথায় বা লাঠিতে করে পণ্য বহন করত। তবে ঘোড়ার গাড়ি চালু হওয়ায় চরবাসীর দুর্ভোগ অনেক কমেছে।
ঘোড়ার গাড়ি চালক রুহুল আমীন জানান, তিস্তার চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়। বর্তমানে আলুর চাষ হয়েছে। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে ঘোড়ার গাড়ি করে বস্তা প্রতি ৩০ টাকা দরে ঘাট পাড়ে পৌঁছে দেই। এভাবে দিনে প্রায় ৫০ বস্তা পর্যন্ত ঘাট পাড়ে নিয়ে আসা যায়। তাতে প্রতিদিন আয় হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ঘোড়ার খাদ্যে প্রতিদিন খরচ হয় ২৫০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চলে।
চরাঞ্চলের কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন, তার ২০ একর জমিতে চাষ করা ৩ হাজার ৪০০ বস্তা আলু ঘোড়ার গাড়ি করে ঘাটে নিয়ে এসেছেন। বস্তা প্রতি ৩০ টাকা করে পরিবহন খরচ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যাতায়াতের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে পণ্য বহনে অনেক সাশ্রয় হত।
উপজেলার তিস্তা পাড়ের পানিয়াল ঘাটের মালিক সোহরাওয়ার্দী জানান, শুকনো মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানি কমে যায়। তখন চরাঞ্চলে কৃষিপণ্য বহনের একমাত্র উপায় ঘোড়ার গাড়ি। নদীতে পানি এলে নৌকা দিয়ে পারাপার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, তিস্তার চরাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে ওঠে। চরে যান্ত্রিক গাড়ি, ভ্যান, রিকশা, অটো চলাচল অসম্ভব। তাই এই এলাকায় ঘোড়ার গাড়ির ব্যাপক ব্যবহার হয়। চরাঞ্চলে রাস্তাঘাট না থাকায় যান্ত্রিক গাড়ি না চলায় চরবাসীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এসব সমস্যা উপেক্ষা করে তারা নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করেন ঘোড়ার গাড়ি।
চরবাসীরা দাবি করেন, তাদের চলাচলের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায় অনেক সাশ্রয় হবে। অসুস্থ রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়াও সহজ হবে। তাই তারা ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানান।
ঘোড়ার গাড়ি চালক মধু মিয়া, কুদ্দুস মিয়া, লাল মিয়া ও আসাদুল ইসলাম বলেন, তিস্তার চরে শুকনো মৌসুমে ৪-৫ মাস ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে পণ্য পরিবহনের কাজ চলে। মে মাসের মাঝামাঝি তিস্তা নদীতে পানি এলে ঘোড়ার গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা আবার অপেক্ষায় থাকেন কবে তিস্তা নদী শুকিয়ে যাবে।
উলিপুরের তিস্তা চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় ঘোড়ার গাড়ির ভূমিকা অপরিসীম। তবে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্রিজ নির্মাণ হলে চরবাসীর দুর্ভোগ অনেক কমবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
//নিউজ/উলিপুর//জাহিদ/মার্চ/০৪/২৫