।। উপজেলা প্রতিনিধি।।
ভূরুঙ্গামারী থেকে প্রায় ৭ মাস নিখোঁজ থাকার পর ফরিদা ইয়াসমিন নামে এক মাকে ফিরে পেয়েছেন তার সন্তান ও পরিবার। মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার আড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা ইয়াসমিন মানসিক সমস্যার কারণে গত বছরের জুলাই মাসে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তার পরিবার তাকে খুঁজে বেড়ালেও কোনো সন্ধান পাননি। অবশেষে এক সচেতন নাগরিকের উদ্যোগে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় ফরিদা ইয়াসমিনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাতে ভূরুঙ্গামারী জামতলা মোড়ে পাগল অবস্থায় এক মহিলাকে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মাইদুল ইসলাম। তিনি মহিলাটির সঙ্গে কথা বলে তার নাম ও ঠিকানা জানতে চান। মহিলাটি নিজেকে ফরিদা ইয়াসমিন বলে পরিচয় দেন এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার আড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানান। মাইদুল ইসলাম মহিলাটির ভিডিও ধারণ করে তা তার ফেসবুক পেজে আপলোড করেন। পাশাপাশি তিনি ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করান এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এ সময় তিনি গজারিয়া থানার ওসির সঙ্গেও যোগাযোগ করে ভিডিও লিংকটি পাঠান এবং মহিলাটির পরিবারের সন্ধান করতে অনুরোধ করেন।
পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) গজারিয়া থানার ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান মাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফরিদা ইয়াসমিনের পরিবারের সন্ধান দেন। এরপর ফরিদার দুই ছেলে মোঃ আনিস ও মোঃ ফরহাদ হোসেন, ছেলের স্ত্রী, চাচা ও ভাতিজা ভূরুঙ্গামারীতে আসেন। হাসপাতালে মাকে দেখে তারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় ফরিদা ইয়াসমিনও কান্নায় ভেঙে পড়েন। হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও চিকিৎসকরাও এ দৃশ্য দেখে আবেগতাড়িত হন।
ফরিদা ইয়াসমিনের ছেলেরা জানান, তাদের মা মানসিক সমস্যার কারণে গত ৭ মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তারা তাকে খুঁজতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন এবং ফেসবুকেও প্রচার করেছিলেন, কিন্তু কোনো সন্ধান পাননি। গজারিয়া থানার ওসির মাধ্যমে তারা জানতে পারেন যে ভূরুঙ্গামারীতে এক মহিলাকে পাওয়া গেছে। এরপর মাইদুল ইসলামের ভিডিও দেখে তারা নিশ্চিত হন যে মহিলাটি তাদের মা। তারা বলেন, “মাইদুল ভাইয়ের এই মহান উদ্যোগের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের মাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন থেকে তিনি আমাদের পরিবারেরই একজন সদস্য।”
ফরিদা ইয়াসমিন হাসপাতালে থাকাকালীন কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-দরুদ পাঠ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, “আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা আমাদের মাকে ফিরে পেয়েছি। এজন্য আমরা লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করছি।”
এ ঘটনায় মাইদুল ইসলামের মানবিক উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, “রাস্তায় কোনো পাগল বা অসহায় মানুষ দেখলে তার পরিবারের সন্ধান করে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।” তিনি সবাইকে এ ধরনের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
//নিউজ/ভূরুঙ্গামারী//মাইদুল/ফেব্রুয়ারি/১৮/২৫