।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামের আলুচাষীরা চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি আলু চাষ করে বর্তমানে বিপাকে পড়েছেন। বাজারে আলুর দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে মালয়েশিয়া ও নেপালে আলু রপ্তানির সুযোগ তৈরি হওয়ায় কিছুটা লোকসান কাটানোর আশা দেখছেন চাষীরা। তারা জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে লোকসান কমানো সম্ভব হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামে ৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষীরা ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করেছেন। চাহিদার তুলনায় বেশি আলু উৎপাদিত হওয়ায় বাজারে দরপতন শুরু হয়েছে। বর্তমানে পাইকাররা ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিচ্ছেন। উৎপাদন খরচ উঠাতে না পেরে অনেক চাষী আলু জমিতেই ফেলে রেখেছেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সারডোব গ্রামের আলুচাষী সফিকুল ইসলাম বলেন, “৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৩০ শতক জমিতে আলু চাষ করেছি। ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারছিলাম না। তবে এখন রপ্তানির জন্য ১২ টাকা কেজি দরে পাইকারের কাছে বিক্রি করেছি। এতে ২৫ হাজার টাকা পাব, কিন্তু আমার ১৫ হাজার টাকা লোকসান হলো।”
এদিকে, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে আলুর সাইজ স্ট্যান্ডার্ড না হওয়ায় সরবরাহকারীরা সব জমি থেকে আলু সংগ্রহ করছেন না। রপ্তানির জন্য ৮০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের আলু প্রয়োজন। আন্ডার সাইজ বা খারাপ আকৃতির আলু গ্রহণ করা হচ্ছে না, যা চাষীদের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করেছে।
বড় চাষীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। চর সারডোবের বড় আলুচাষী কাদের মিয়া জানান, “২ কোটি টাকা খরচ করে ৯৫ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। বর্তমান বাজারমূল্য দেখে আমি চরম দুশ্চিন্তায় আছি। দাম না বাড়লে আমরা মাঠে মারা যাব।” তিনি আরও বলেন, “একর জমিতে আলু চাষে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়, কিন্তু উৎপাদিত আলু ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে বিরাট লোকসান হবে।”
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার আলু রপ্তানিকারক সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ২৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়া ও নেপালে ৪৫ টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “চাহিদা বাড়লে চাষীদের ক্ষতি কিছুটা কমবে। আমরা রপ্তানিকারকদের সাথে যোগাযোগ করে আলু রপ্তানি শুরু করেছি, যা চাষীদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বিদেশে আলুর চাহিদা বাড়ছে, যা চাষীদের জন্য ভালো খবর। সঠিক মূল্যে আলু বিক্রি করতে পারলে তারা লাভবান হতে পারবেন।”