।। নিউজ ডেস্ক ।।
চিলমারীতে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হলো উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ। ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী শফিউল আলম রাজা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই মহাসমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম কৃষকের অধিকার রক্ষায় জোরালো বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘বাংলাদেশের হাটঘাটে ইজারা প্রথা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কৃষকের শ্রমে উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কালা আইন হিসেবে পরিচিত বীজ বিপণন ও কৃষি বীজ আইন ২০১৮ বাতিলের দাবি জানাই। কৃষকের নামে বরাদ্দ হওয়া ভর্তুকি অর্থ কৃষকের কাছে না পৌঁছে বিদেশি করপোরেশনগুলোর পকেটে চলে যাচ্ছে। অথচ কৃষক মাত্র ৫০০ টাকার ঋণের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপমানিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অদৃশ্য খাজনার নামে সরকার প্রতি বছর ৮ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। অথচ এই অর্থের সিংহভাগ ব্যবহার করা হয় কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য। কৃষকের কষ্টার্জিত অর্থে গাড়ি কেনা, তেল সরবরাহ এবং শহরে বিলাসবহুল রাস্তা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কৃষকের দুঃখ-কষ্টের প্রতি কেউ নজর দেয় না।’
সমাবেশে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ হাসান নলেজের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়াজ রহমান, শিক্ষা ও শিশু সুরক্ষা আইন (শিশির) এর আহ্বায়ক রাখাল রাহা, অর্থনীতিবিদ দিদারুল ভূঁইয়া, অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম বীর, চিলমারী প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম সাবু এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, ‘দেশভাগের পর থেকে বিভিন্ন আন্দোলনে কৃষকরা রক্ত দিয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকার কখনোই সঠিকভাবে মর্যাদা পায়নি। বিদেশি কোম্পানিগুলোর স্বার্থে সরকার সার, বীজ এবং কীটনাশকের ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও কৃষকের জমির উর্বরতা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাঁতী, জেলে এবং কৃষকরা মহাজনদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই বাস্তবতায় কৃষকের অধিকার নিশ্চিত না করে কোনো সংস্কার আইন গ্রহণ করা যাবে না।’
সমাবেশে বক্তারা ১২ দফা দাবি উপস্থাপন করেন, যা দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা উল্লেখ করেন। এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইজারা প্রথা বাতিল, বীজ বিপণন আইন সংস্কার, ভর্তুকির অর্থ সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছানো এবং বিদেশি কোম্পানির আধিপত্য বন্ধ করা।
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই কৃষকের অধিকার আদায়ের জন্য এই আন্দোলন হাওর-বাওরসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’
উত্তরবঙ্গের কৃষক মহাসমাবেশ কৃষকের অধিকার আদায়ে নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করেছে। দেশজুড়ে এই দাবি আদায়ের আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হয়, তা সময়ই বলে দেবে।