।। নিউজ ডেস্ক ।।
বাজার থেকে দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছে সয়াবিন তেল। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর দাম। রান্নার তেলের এই সংকট কাটাতে কুড়িগ্রামের কৃষকরা ঝুঁকছেন সরিষা চাষের দিকে। সরকারি কৃষি বিভাগও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, যা কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ট্যাংরার ভিটা এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকায় সরিষার চাষ হয়েছে। এলাকাটি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় প্রতি বছর বন্যার পানিতে ৪ থেকে ৫ মাস জমি ডুবে থাকে। বন্যার পানি নেমে গেলেও জমিতে পানি আটকে থাকায় ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। ফলে বোরো ধান চাষই ছিল এখানকার প্রধান ভরসা। তবে একাধিকবার বন্যা বা দীর্ঘস্থায়ী পানিবন্দী অবস্থায় ধানও ঘরে তুলতে পারেন না কৃষকরা। ক্ষতি কমাতে এখন তারা সরিষা চাষের পর বোরো ধানের দিকে ঝুঁকছেন।
ট্যাংরার ভিটা গ্রামের কৃষক ফজলুল হক জানান, তাদের এলাকাটি নিচু হওয়ায় বন্যার প্রভাব বেশি। “কখনো বোরো ধান পাই, কখনো পাই না। ধানে তেমন লাভ না হওয়ায় সরিষা চাষ করি। এতে নিজেদের তেলের চাহিদা মেটাই এবং বিক্রির টাকায় সংসারের প্রয়োজন মেটাই।”
কৃষক শহিদুল জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। “প্রতি বিঘায় বীজ, হালচাষ, সেচ, ঔষধ, ও কাটামারা মিলিয়ে খরচ হয় ৪,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা। তিন মাস পরে সরিষা মাড়াই করে বিঘায় প্রায় ৪ মণ ফলন পাই। বর্তমানে প্রতিমণ সরিষার দাম ৩,০০০ টাকা। এতে বিঘাপ্রতি প্রায় ৭,০০০ থেকে ৭,৫০০ টাকা লাভ হয়।” ধানের তুলনায় সরিষার লাভ বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ধানে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১৪,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা। কিন্তু বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লোকসান গুনতে হয়।”
কৃষাণি সাজেদা বলেন, “সয়াবিন তেলের দাম বেশি, তাই সরিষা ভেঙে তেল বানিয়ে খাই। গরিব মানুষ টাকা দিয়ে তেল কিনতে পারে না।” গৃহিণী নুরজাহান জানান, “এবার বাজারে সয়াবিন তেল নেই, আর যা আছে তার দাম অনেক। তাই অল্প জমিতে সরিষা চাষ করি, তেল বানাই আর বিক্রি করে সংসার চালাই।”
উপসহকারী কৃষি অফিসার নকুল কুমার জানান, ট্যাংরার ভিটা গ্রামে প্রায় সাড়ে ৩০০ বিঘা জমি রয়েছে। প্রতিবছর কৃষকরা অল্প পরিমাণে সরিষা চাষ করতেন। তবে এবার সরকারি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২০০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাহিদা আফরিন বলেন, “বর্তমানে বাজারে সয়াবিন তেলের ঘাটতি রয়েছে। তাই তেলের ঘাটতি কমাতে সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। গত বছর ১,৮৩৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। এবার তা বেড়ে ১,৯৩৮ হেক্টর হয়েছে।”