।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুর থানায় সালিশ শেষে প্রতিপক্ষের হামলায় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম (৩৯) নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের সমর্থকরা আশরাফুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করেন। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভীর উল ইসলামের পক্ষের যুবদল নেতা ছিলেন। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত কর্মীরা প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর এবং তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেন।
নিহতের পিতা আয়নাল হক বাদী হয়ে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২৫ জনসহ মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাদ আসর কাজিরচর মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে আশরাফুলকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুল জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় সালিশ চলাকালে আশরাফুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সালিশে উপস্থিত কর্মীদের বরাতে তিনি আরও জানান, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দোলন এলাকার এক ছেলের সঙ্গে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফড়া এলাকার এক মেয়ের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ছাত্রদলের এক নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দাখিল করা হলে শুক্রবার থানার গোলঘরে সালিশে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন আহত হন। আশরাফুলকে উলিপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, আশরাফুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাসভীর উল ইসলামের সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল খালেকের সমর্থক আমিনুল ইসলামের হোটেল ভাঙচুর করেন। এরপর জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার শিকার পরিবারগুলো নিরাপত্তার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের ফোন বন্ধ থাকায় কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মেহেরুল ইসলাম জানান, রাত ৮টার দিকে আশরাফুল ইসলামকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জিল্লুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় তিনি ছুটিতে ছিলেন এবং রাতে কর্মস্থলে যোগ দেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। নিহতের পিতা আয়নাল হকের দায়ের করা মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপি সভাপতি হায়দার আলী মিয়া এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভীর উল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ফোন রিসিভ করলেও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।