।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
চিলমারী উপজেলায় নিয়মনীতি উপেক্ষা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেললাইনের ধারে এবং জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। দীর্ঘদিন ধরে এসব ভাটা পরিচালিত হলেও প্রশাসনের নিরব ভূমিকা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে, যা কৃষি উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মাছাবান্দা, বালাবাড়িহাট, টিএনটি এলাকা এবং ব্যাপারির বাজারের মতো বিভিন্ন এলাকায় জনবসতি ও দুই-তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। অনুমোদনবিহীন এসব ভাটার কারণে আবাদি জমি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষি জমির মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও অবাধে চলছে কাটাছেঁড়া। ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করতে সাধারণ কৃষকদের নগদ টাকার লোভ দেখানো হচ্ছে। অনেক কৃষক দালালদের প্ররোচনায় পড়ে জমির ওপরিভাগের মাটি বিক্রি করছেন। ভাটার মালিকরা এক ফুট মাটি কাটার কথা বললেও দেড় ফুট বা তার চেয়েও বেশি মাটি কেটে নিচ্ছেন। এর ফলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে। পরিস্থিতি অনিয়ন্ত্রিত থাকলে চিলমারীর ফসলি জমি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দ্রুত প্রয়োজন।
স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলাম, রাসেল, আশরাফুলসহ অনেকে জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে জমি উঁচু-নিচু হয়ে যাচ্ছে। এতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি রেললাইনের ধারে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংলগ্ন এলাকায় ইটভাটা নির্মাণের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
“এস.টি ব্রিকস” এর মালিক আলহাজ্ব মাহফুজার রহমান জানান, তাদের ভাটার গত বছরের অনুমতি ছিল এবং এবারও অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে অন্য ভাটার মালিকরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম জানান, চিলমারীতে পাঁচটি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে কেবল “এইচ.আর.বি. ব্রিকস” এর অনুমোদন আছে। বাকিগুলোর অনুমোদন নেই। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব ভাটা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/ডিসেম্বর/১৯/২৪