।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুর উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে এখন ব্যস্ততা বেড়েছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চাষিরা আশা করছেন ফুলকপি ও বাঁধাকপির বাম্পার ফলন হবে। প্রতিবছরই চাষিরা ভালো দামের প্রত্যাশায় আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষাবাদ করে থাকেন। এই মৌসুমেও তারা শীতের শুরুতেই চাষ শুরু করেছেন এবং ফলন দেখে তারা সন্তুষ্ট। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাচ্ছে। ফলে কৃষকরা দ্বিগুণ লাভের মুখ দেখছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯০ হেক্টর, যার মধ্যে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে চাষ সম্পন্ন হয়েছে এবং এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলাজুড়ে বিস্তীর্ণ জমিতে সবজির সমাহার এখন নজর কাড়ছে। থেতরাই, দলদলিয়া, গুনাইগাছ এবং বজরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় যেমন সাতদরগাহ ফকিরপাড়া, টাপুরকুটি, গুনাইগাছ চর, থেতরাইর চরসহ অন্যান্য স্থানে চাষিরা পতিত জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করছেন।
আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এই ফসল বাজারে ব্যাপক হারে বিক্রি শুরু হবে বলে আশা করছেন কৃষকেরা। যাদের নিজস্ব জমি নেই, তারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে হাইব্রিড জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করছেন। এ অঞ্চলের মানুষ সারা বছরই বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং লাভবান হন।
থেতরাই ইউনিয়নের সাতদরগাহ ফকিরপাড়া এলাকার চাষি আবু বকর সিদ্দিক জানান, তিনি এবারে দুই একর জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত তার জমিতে বাম্পার ফলন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “দুই একর জমিতে চাষে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আরও ২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। প্রায় ২০ হাজার কপির চারা রোপণ করেছি, যার থেকে প্রায় ৪০০ মণ কপি উৎপাদনের আশা করছি। যদি প্রতি মণ কপি ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারি, তাহলে মোট আয় হবে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।” তিনি আরও বলেন, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কপি বিক্রি শুরু করতে পারবেন।
অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকার চাষি যেমন আবু তাহের, আব্দুল আউয়াল, বজলুর রশিদ, আলম মিয়া, কুদ্দুস আলী এবং জয়নাল আবেদিন জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন খুব ভালো হয়েছে এবং বাজারেও কপির ভালো দাম রয়েছে। তবে তারা মনে করেন, সবজি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন সার ও কীটনাশকের দাম কিছুটা কম হলে আরও বেশি লাভবান হওয়া যেত।
পৌর শহরের সবজি বাজারের আরৎদার রনি মিয়া ও আতিকুর রহমান বলেন, “গত কয়েকদিনে সবজির বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। মোকামে দাম কম থাকায় পাইকারিতেও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে পাতা কপি কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতি পিচ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপির দামও কমেছে। তবে স্থানীয়ভাবে কপির সরবরাহ বাড়লে বাজার দর আরও কমতে পারে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, “চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চাষিরা আগাম হাইব্রিড জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেছেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ বছর ফলন খুব ভালো হয়েছে এবং বাজারেও ভালো দাম রয়েছে। চাষিরা আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ফসল বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আমরা আশা করছি।”
//নিউজ/উলিপুর//জাহিদ/ডিসেম্বর/১৪/২৪