।। নিউজ ডেস্ক ।।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ২০২৪ সালের বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণা জাগানো এবং প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে স্থান পেয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলার রিকতা আখতার বানু লুৎফা। নার্স হিসেবে কর্মরত রিকতা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে দেশজুড়ে প্রশংসা অর্জন করেছেন।
বিবিসি তাদের তালিকায় ১০০ নারীর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে, যারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছেন। তারা পাঁচটি ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়েছেন: জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি, এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি। বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে স্থান পাওয়া রিকতা আখতার বানু লুৎফা বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
রিকতা আখতার বানুর ব্যক্তিগত জীবন সংগ্রামই তাকে এই অনন্য অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তার মেয়ে তানভীন দৃষ্টি মনি সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। স্থানীয় বিদ্যালয়ে মেয়েকে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি নিজের জমি বিক্রি করে একটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩০০-এর বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে এবং এটি সমাজে প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি ২০২০ সালে এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে এখানে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ১০ জন এমপিও সুবিধা পেলেও বাকিরা এখনও এ সুবিধার বাইরে। এই বিদ্যালয়ে অটিজমসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কর্মজীবনে রিকতা চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কাজ করছেন। তার জন্ম কুড়িগ্রামের দক্ষিণ ধনঞ্জয় গ্রামে। বর্তমানে তিনি স্বামী আবু তারিক আলম এবং দুই সন্তানকে নিয়ে চিলমারীতে বসবাস করছেন।
বিবিসির এই স্বীকৃতি সম্পর্কে রিকতা বলেন, “আমার মেয়ের কারণে আমি এই প্রতিষ্ঠান গড়েছি। তার জন্যই আজ আমি বিবিসির তালিকায় জায়গা পেয়েছি। এই কৃতিত্ব একার নয়, যারা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তাদের সকলের।” বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিন শাহও এই সাফল্যে আনন্দিত এবং রিকতার ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
রিকতা আখতার বানুর এই অর্জন শুধু তার একার নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্যও এক বড় গৌরবের বিষয়। তার গল্প পৃথিবীর বহু নারীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।