।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় যেন অফিস নয়, একেবারে আবাসিক হোটেল। এখানে থাকা-খাওয়ার জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। তবে এই সুযোগের আড়ালে চলমান নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অফিস সহায়ক নুরজাহান বেগম দুপুরের খাবারের জন্য অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার বদলে রান্নায় নিয়োজিত। অফিসের মধ্যেই রয়েছে রাইস কুকার, ইনডাকশন চুলা এবং প্রয়োজনীয় রান্নার সামগ্রী। পাশের কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে বিছানা, চেয়ার এবং আলমারির মতো জিনিসপত্র। অফিস সহকারী জেসি আক্তারের কক্ষেও রয়েছে বিশ্রামের ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার এমন আয়োজন চলে আসছে বলে জানা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালে উপপরিচালক মোদাব্বের হোসেন যোগদানের পর থেকেই এই অনিয়মের সূত্রপাত। তিনি অফিস কক্ষে রাত্রিযাপন করেন এবং কার্যালয়কে নিজের বাসস্থানে পরিণত করেছেন। সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপপরিচালকের বিরুদ্ধে বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মচারীদের আকস্মিক বদলি করে পরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পূর্বের কর্মস্থলে ফেরত বদলি করা হয়। যারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান, তাদের শাস্তিস্বরূপ দূরের জেলায় বদলি করা হয়।
২০২২ সালে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগে দুর্নীতি এবং কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশ অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। সুপারিশ তালিকায় থাকা কয়েকজনকে গরিব বলে দেখানো হলেও তারা আসলে স্বচ্ছল পরিবারের সদস্য। লিখিত পরীক্ষার পর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মোদাব্বের হোসেন সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন। এছাড়া সরকারি বরাদ্দের ওষুধ ভারতে পাচার হওয়ার ঘটনা এবং বিভিন্ন সরকারি তহবিল আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বদলীর ভুক্তভোগী জানান,বর্তমান ডিডি যোগদানের পর থেকে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই কর্মস্থল থেকে বদলি করান। কেউ মাতৃত্ব ছুটি কেউবা সাময়িক ছুটিতে থাকাবস্থাতেও বদলির স্বীকার হয়েছে। পুনরায় আগের কর্মস্থলে বদলি নিতে গেলে ৫০হাজার থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নেন। যারা বদলির ব্যাপারে প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে জেলার বাইরে বদলি করিয়েছেন। আর তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে বা অভিযোগ দিতে সাহস পায় না। কারণ তার বন্ধু রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা: কামাল আহমেদসহ মন্ত্রণালয়ের অনেকেই তার শুভাকাংখি। ডিডি সাহেবর অনিয়মের প্রধান সহকারি জেলা অফিসের সহকারি পরিচালক পদে প্রায় ১৪বছর ধরে থাকা ডা: মনজুর রহমান। সঠিক তদন্ত হলে ডিডির অপকর্মের ফিরিস্তি উঠে আসবে।
ফ্যামিলি ওয়েল ফেয়ার এ্যাসিসটেন্ট কাকলী আকতার বলেন,আমার যোগ্যতায় চাকুরি হয়েছে। তালিকায় নাম থাকার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আপনাকে কোন জবাব দিতে বাধ্য নই আমি। উপপরিচালক মোদাব্বের হোসেন এসব অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেন, রান্না এবং থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
কুড়িগ্রাম সনাকের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসে থাকা এবং রান্নার ব্যবস্থা আইনবহির্ভূত। এমন কার্যকলাপ এই অঞ্চলের মানুষকে সঠিক নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত করছে।
কুড়িগ্রামের পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।