।। নিউজ ডেস্ক ।।
বিশ্বজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার রক্ষায় বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলন নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে লন্ডনে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। সংগঠনটি প্রবাসীদের অধিকার আদায় এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ যুক্ত হন এবং তাঁদের ঐক্য ধরে রাখতে এই সংগঠনটি গড়ে ওঠে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) লন্ডনের হোয়াইট্যাপেলে “প্রবাসীদের স্মৃতিতে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের দিনগুলো” শিরোনামে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার বিদায় নিলেও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা আগের মতোই অব্যাহত থাকবে। তবে দেশে প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, প্রবাসীদের নাগরিক হিসেবে যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য প্রবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা দেশে ও প্রবাসে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন। ইউরোপ ও আমেরিকার প্রবাসীদের তুলনায় তাঁদের অধিকার রক্ষায় অনেক বেশি বঞ্চিত হতে হয়। সংগঠনটি প্রবাসীদের জীবনমান উন্নত করতে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীরা দালাল চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে ভিসার নামে প্রচুর অর্থ হারান, যা তাঁদের পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়। এই প্রতারণা বন্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সংগঠনটি বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই থাকা প্রবাসীদের বৈধকরণ, প্রবাসীদের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং দেশে ফেরত প্রবাসীদের জন্য পেনশন সুবিধাসহ কর্মসংস্থানের দাবি জানায়।
প্রবাসীদের জন্য ১২ দফা সংস্কার প্রস্তাব
১. বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ এবং যথাযথ মর্যাদা প্রদান।
২. বাংলাদেশ বিমানের টিকিটের মূল্য কমিয়ে সহনীয় করা।
৩. বিদেশে মারা যাওয়া অস্বচ্ছল প্রবাসীদের লাশ বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা।
4. অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ।
৫. প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, এবং স্মার্ট কার্ড সহজীকরণ।
৬. দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রবাসীদের অংশগ্রহণের সুযোগ।
৭. প্রবাসীদের স্বার্থে প্রবাসী এমপি নির্বাচন করা।
৮. প্রবাসফেরত কর্মীদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা।
৯. বৈধ কাগজপত্রহীন প্রবাসীদের বৈধকরণ।
১০. প্রবাসীদের জন্য সার্বক্ষণিক সহায়তা ডেস্ক চালু।
১১. প্রবাসীদের জমি ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
১২. দালালমুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা চালু।
বিশ্বের প্রায় ৪০টির বেশি দেশ থেকে সমন্বয়কেরা সংগঠনটির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে জার্মানি, পর্তুগাল, ফ্রান্স, আমেরিকা, কানাডা, ইতালি, চেক রিপাবলিক, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, মালয়েশিয়া, তুর্কিয়ে, গ্রিস, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, মাল্টা, রোমানিয়া, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জাপান, মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, জাপান, ঘানা অন্যতম।