।। নিউজ ডেস্ক ।।
চিলমারীর রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, বসতবাড়ি এবং অবকাঠামো।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুটি চর ভেঙে প্রায় ৫০০ পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। এছাড়াও নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ড্রেজার ব্যবহারের ফলে নদীর তীর ও পরিবেশ ব্যাপকভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্প এলাকাজুড়ে বালু উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও রমনা ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রভাবশালীরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে জনসাধারণের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল বাজার থেকে ফকিরেরহাট পর্যন্ত এবং রমনা ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া এলাকায় ৭-৮টি পয়েন্টে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বালু পরিবহনের কারণে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে এবং ধুলায় জনজীবন অতিষ্ঠ।
এলাকাবাসী জানায়, বালু উত্তোলনের সঙ্গে রানীগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিম, মাহফুজার রহমান মঞ্জু হাজি, লিটন, মান্নান, আজাহার আলীসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী জড়িত। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম জানান, “আমি শুধু মঞ্জু হাজির পয়েন্টে শেয়ারধারী। এর বেশি কিছু জানি না।”
স্থানীয় ফাতেমা বেগম জানান, “বালুর জন্য বাড়িতে শান্তি করে ভাত খেতে পারি না। সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।” এলাকাবাসীর আশঙ্কা, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ডান তীর রক্ষা প্রকল্প ভেঙে পড়বে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, “বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি প্রথমবার শুনলাম। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চিলমারী নৌফাঁড়ি থানার উপপরিদর্শক মো. ফেরদৌস আলী এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাকও বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন। তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তারা।
স্থানীয়রা মনে করেন বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে জনজীবন ও প্রকল্প রক্ষা করা সম্ভব হবে না।