।। নিউজ ডেস্ক ।।
কেরোসিন কিনে কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল না, এমন এক পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করতেন হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। তিনি সেবান সফুরা বেগমের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছেন। তবে পুলিশ অফিসার হওয়ার পর ক্ষমতার জোরে তার বোনের ছেলেকেই একটি মামলায় গ্রেফতার করানোর অভিযোগ উঠেছে।
আলেপ উদ্দিন এলাকার ছোট ভাই আলতাফ হোসেনের মাধ্যমে নিজস্ব শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। আলতাফের কথাই এলাকার আইন হিসেবে গণ্য হতে শুরু করেছিল। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ তাঁদের ক্ষমতাকে ‘নয়া টাকার গরম’ বলে অভিহিত করেছেন, যা পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে।
আলেপ উদ্দিনের বাড়ি রাজারহাট উপজেলার ১ নম্বর হাড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবোত্তর (চায়না বাজার) গ্রামে। তার বাবা মৃত অজর উদ্দিন, যিনি দ্বিতীয় সংসারের সন্তান আলেপ। পরিবারে চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আলেপই উচ্চশিক্ষিত। আলেপ ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছিলেন এবং সেবান সফুরা বেগমের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে তাঁর ছোট ভাই আলতাফ রিকশা চালিয়ে তাঁর পড়াশোনার খরচ চালাতেন। এছাড়া সাবেক এমপি আসাদুল হাবিব দুলুও তাঁকে সহায়তা করেছিলেন। ৩১তম বিসিএস পাস করে ২০১৩ সালে পুলিশে যোগদান করার পর আলেপ ও তার পরিবারের জীবন বদলে যায়।
আলেপের ভাই আলতাফ ও আবু তাহেরের সম্পদ এবং দাপট বাড়তে থাকে। আলতাফ গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী, যা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাঁদের বাড়ির পাশেই চায়না বাজার। সেই বাজারের কাছে নিতীন চন্দ্রের ৫২ শতাংশ জমি ছিল। কিছুদিন আগে আলতাফ সেই জমি জোর করে লিখে নেন। নিরীহ কৃষক নিতীন প্রতিবাদ করতে পারেননি। জমি বেচতে না চাইলেও জোর করে পাঁচ লাখ টাকা ধরিয়ে দিয়ে জমি লিখে নেন আলতাফ। এর দুই দিন পরই সেই জমি ২৬ লাখ টাকায় বেচে দেন আলতাফ। নিতীন বলেন, ‘হামরা হিন্দু মানুষ কী করুম। হামি জমি বিক্রি করতে চাইনি হামাক জোর করে জমিখানি লিখি নিছে।’ এ ঘটনার পর তিনি বিষয়টি মোবাইল ফোনে আলেপ উদ্দিনকে জানিয়েছিলেন। আলেপ কথা দিয়েছিলেন সুরাহা করে দেবেন। কিন্তু মাসের পর মাস গেলেও সুরাহা আর হয়নি। সারাক্ষণ তাঁকে ভয়ের মধ্যে থাকতে হতো। শনিবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে অভিযুক্ত আলতাফ বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা। কারো জমি কি জোর করে লিখে নেওয়া যায়?’
আলতাফের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। সেবান সফুরা খাতুনের ছেলে সাদিকুল ইসলাম স্বপন জানান, তাঁকে ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল, এবং তিনি ধারণা করেন যে, তাঁকে আলেপ পরিবারের ইঙ্গিতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল।
আলতাফ দাবি করেন যে তাঁদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, তাঁদের পরিবার কখনোই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল না, এবং তার ভাই আলেপ উদ্দিন একজন সৎ মানুষ। তিনি আরও দাবি করেন, আলেপ তার পুলিশি ক্ষমতার মাধ্যমে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আলেপের টাকায় এলাকায় ৩০ বিঘা জমি কিনে পুকুর করার অভিযোগ রয়েছে আপনার বিরুদ্ধে? এমন প্রশ্নের জবাবে আলতাফ বলেন, এটা ঠিক না। আমার সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে পুকুর রয়েছে।’ সাড়ে ১১ বিঘা জমি কী করে কিনলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে জমির দাম কম। ৮-৯ হাজার টাকা শতক জমি কেনা যায়।’ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলেপের চার ভাইয়ের মধ্যে আবু বক্কর সৎ জীবন যাপন করেন। এ কারণে আলেপসহ অন্য তিন ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই।
হাড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ মন্তব্য করেন, ‘নয়া টাকা-পয়সা হলে শরীর গরম থাকে। ভাই পুলিশের বড় অফিসার হলে পয়সার তো অভাব থাকার কথা না।’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ।