।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে বিএডিসি (বীজ) অফিস ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী এবং জনবল সংকটের কারণে দুই বছর আগে অফিসটি অলিখিতভাবে জেলা সদরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় কৃষকরা সরকারি বীজ সংগ্রহে অসুবিধায় পড়ছেন। বাজারে বীজ পাওয়া গেলেও তা মানসম্মত নয় এবং দাম চড়া। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কৃষকরা জেলা অফিস বা ডিলারদের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।
জানা গেছে, উপজেলায় ২৫ জন ডিলার থাকলেও মাত্র ৭ জন ধানবীজ উত্তোলন করেছেন। তবে আলুবীজ উত্তোলন করেছেন সব ডিলার। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২,৫৪০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড জাত ৮,৩৪০ হেক্টর, উফশী ১৪,৫০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ১৫০ হেক্টর। এদিকে আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১,১০০ হেক্টর, যার মধ্যে উফশী জাত ৯০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ২০০ হেক্টর।
কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি বীজের সরবরাহ না থাকায় বাজার থেকে বেশি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। ৫৮০ টাকার সরকারি বীজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। এর সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কোম্পানির বীজ চড়া দামে বিক্রি করছেন। বাজারে ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে।
চরেয়ার পাড় গ্রামের কৃষক সোলেমান সরকার বলেন, “বীজ অফিস না থাকায় বীজও পাই না। বাজারে সরকারি বীজ পাওয়া গেলেও দাম বেশি। নকল না আসল, তাও বুঝি না। গতবার বাজারের বীজে আবাদ করে ভালো ফলন পাইনি। কৃষকের জন্য কেউ নেই।”
ডিলার ফারুক হোসেন বলেন, “১৫০ কেজি ৮৯ জাতের ধানবীজ, ৫০০ কেজি ২৯ জাতের ধানবীজ এবং ৪০ কেজির ৬৬ বস্তা আলুবীজ বরাদ্দ পেয়েছি। এত অল্প বীজ দিয়ে কতজনকে দেব? নিজের আবাদ করতেই ১০০ বস্তা আলুবীজ লাগে। তাই কৃষকদের দিতে পারিনি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, “ডিলাররা বীজ উত্তোলন করেছেন কিনা, তা নিশ্চিত নই। তবে বাজার তদারকি করা হবে।”
জেলা বীজ বিপণন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “যেসব ডিলার বীজ উত্তোলন করেননি, তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না। বাজার তদারকির দায়িত্ব উপজেলা তদারকি কমিটির। ভবন অযোগ্য এবং জনবল সংকটের কারণে অফিসটি জেলাতে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, “উপজেলায় বীজ কেন্দ্র না থাকার বিষয়টি প্রথমবার জানলাম। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় কৃষকরা দ্রুত বীজ সরবরাহ কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি মানসম্মত ও সুলভ মূল্যে বীজ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। বাজার তদারকির অভাব এবং ভেজাল বীজের কারণে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।