।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
চিলমারী উপজেলার রাজারভিটা এলাকার ব্রহ্মপুত্রের কোল ঘেঁষে বসবাস করেন লিপি বেগম। তার জীবন ছিল চরম অভাব-অনটনে ভরা। স্বামী আলম বাদশা ছিলেন দিনমজুর। স্বামীর অসুস্থতা ও আয়হীনতার কারণে সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকত। জীবিকার সন্ধানে ঢাকা গেলে ২০২৩ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। স্বামীর মৃত্যুতে এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েন লিপি বেগম।
অর্থনৈতিক সংকটে বড় মেয়ে আখিতার বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবলেও, আরডিআরএস বাংলাদেশের চাইল্ড নট ব্রাইড (সিএনবি) প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জানার পর তিনি সিদ্ধান্ত বদলান। সংসারের হাল ধরার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিনে কাজ শুরু করেন। প্রকল্পের সহায়তায় ১৭ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা ও আয়বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাগল পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার আয়ের পথ খুলে যায়।
বর্তমানে লিপি বেগম বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ, ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন এবং গরু ক্রয়ের মাধ্যমে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। তিনি বলেন, “অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করেছি। স্বামীর মৃত্যুর পর জীবনের মানে হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু সিএনবি প্রকল্পের সহায়তায় আজ আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি। সন্তানদের পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করে তুলতে চাই।”
শুধু লিপি বেগম নন, উপজেলার রমনা খামার এলাকার শাহানা বেগমও সিএনবি প্রকল্পের মাধ্যমে জীবনে নতুন আলোর দেখা পেয়েছেন। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে দুই মেয়ের বিয়ে দিলেও তৃতীয় মেয়ে মুক্তার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। প্রকল্প থেকে পাওয়া ১৭ হাজার টাকার সহায়তায় তিনি ছাগল পালন ও সবজি চাষ শুরু করেন। পরে তার স্বামীকে একটি নৌকা কিনে দেন, যা এখন তাদের পরিবারের আয়ের বড় উৎস। মুক্তা বর্তমানে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের সরদারপাড়ার (মাঝিপাড়া) খোতেজা বেগমও সিএনবি প্রকল্পের সহায়তায় সেলাই ও কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করে তিনি দুই মেয়ের পড়াশোনা নিশ্চিত করছেন। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন এবং ছোট মেয়েকে শিক্ষিকা বানানোর স্বপ্ন দেখছেন।
সিএনবি প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা বাল্যবিয়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। নদীভাঙন ও দারিদ্র্য বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ। সিএনবি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬টি ইউনিয়নের ১৬২টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলো মেয়ে শিশুর পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার শর্তে এই সহায়তা পেয়েছে। ফলে তারা অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জন করছে এবং বাল্যবিয়ের ঝুঁকি কমেছে।”
এই প্রকল্পের মাধ্যমে চিলমারী উপজেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনযাত্রায় এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/নভেম্বর/২০/২৪