।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে হাতিয়া গণহত্যা দিবস। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে হাতিয়া গণহত্যা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে হাতিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, বিএনপি এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হাতিয়া ইউনিয়ন শাখার কমান্ডার মো. মজাহার আলী বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দাগারকুঠি এলাকার শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও তৈরি হয়নি। আমরা হাতিয়া গণহত্যায় শহীদদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ এবং তাদের নামফলক স্থাপন ও পুনর্বাসনে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই।”
উল্লেখ্য, উলিপুর উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত হাতিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের দাগারকুঠি নামক স্থানে ১৯৭১ সালের ২৩ রমজান, শনিবার ফজরের নামাজের পরপরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দেশীয় দোসররা কুড়িগ্রাম, উলিপুর ও চিলমারী থেকে ব্রহ্মপুত্র এবং ধরলা নদীর তীরবর্তী হাতিয়া ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে আক্রমণ চালায়। দাগারকুঠি, নয়াদাড়া, নীলকণ্ঠ, হিজলী গোপপাড়া, অনন্তপুর, হাতিয়া ভবেশ, সরকারি গ্রাম, রামখানা, কলাতিপাড়া, হাতিয়া বকসী, রামরামপুর, সাতভিটা, বকসিগঞ্জ, জলাঙ্গারকুটি, শ্যামপুর, ব্যাপারী গ্রাম, মণ্ডলের হাট, সাদিরগ্রাম, আঠারোপাইকা ও মাদারটারী — এই ২০টি গ্রাম থেকে ৬৯৭ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে দাগারকুঠি বধ্যভূমিতে জড়ো করা হয়। এরপর তাদেরকে গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
সেই দিন নির্যাতন এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগও চালানো হয়। লালসার শিকার হন বহু নারী, এমনকি কোলের শিশুরাও রেহাই পায়নি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার গাবুরজান গ্রামের বীরাঙ্গনা হাছিনা বেগম এবং বেঁচে যাওয়া রামরামপুর গ্রামের কামাল হোসেন, ভাটিগ্রামের আইয়ুব আলী সেই ভয়াল দিনের কথা স্মরণ করলে এখনও ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলেন।
দাগারকুটি বধ্যভূমিতে শহীদদের মরদেহ দুই দিন পড়েছিল, পরে গ্রামবাসীরা এসে তাদের গণকবর দেন। কিন্তু সেই গণকবর এবং স্মৃতিস্তম্ভ ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে শহীদদের স্মরণে হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর বাজারের প্রবেশ মুখে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।
নিউজ/উলিপুর//জাহিদ/নভেম্বর/১৩/২৪