।। নিউজ ডেস্ক ।।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে উলিপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভোট কেন্দ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার যথাযথ ব্যবহার হয়নি এবং নামমাত্র কাজ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ বিভাগ ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র হিসেবে ৪ হাজার ১৭৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মেরামতের উদ্দেশ্যে কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নসহ একটি পৌরসভায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২’শ ৬৮টি, এর মধ্যে ৩৭টি বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র মেরামতের জন্য ২৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বরাদ্দের তালিকা অনুযায়ী, কালুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২ লক্ষ টাকা, বুড়াবুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ১ লক্ষ টাকা, খামার বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এবং ভদ্রপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তবে রবিবার (৩ নভেম্বর) সরেজমিনে কালুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে, উন্নয়নমূলক কোনো কাজই দেখা যায়নি। বরাদ্দকৃত টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শীতেন্দ্রনাথ বর্মণ কোনো তথ্য দিতে পারেননি এবং রাগান্বিত হয়ে বলেন, “সব টাকা দিয়েই আমি কাজ করেছি, তবে কাজের কোনো তথ্য আপনাদের দেখতে পারবো না।”
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরহাদ হোসেন খন্দকার বলেন, “আপনারা কেন আমাকে বিরক্ত করছেন, আপনাদের যা ইচ্ছা হয় লিখেন।” একই চিত্র দেখা যায়, বুড়াবুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বরাদ্দের পরিমাণ ১ লক্ষ টাকা হলেও প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহেল কাফি কোনো ভাউচার বা বিল দেখাতে ব্যর্থ হন, যদিও তিনি দাবি করেন সব কাজ ঠিকঠাক হয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন জানান, “ভোট কেন্দ্র মেরামতের বরাদ্দের বিষয়ে আমার জানা নেই। তৎকালীন আমার শিক্ষা অফিসার আমির হোসেন এসব বিষয়ে কোনো তথ্য আমাকে দেয়নি। তাই এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না।”
ভদ্রপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মল্লিকা বেগম জানান, তিনি ভোট কেন্দ্র মেরামতের বরাদ্দের বিষয়ে কিছু জানেন না এবং কোনো কাজও করেননি। খামার বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল হককেও পাওয়া যায়নি।
তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নিলুফা বেগমকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাইলে, তিনি প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার জন্য সময় না দিয়ে ফোন কেটে দেন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে কোনো কিছু বলতে নিষেধ করেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসহাক আলী বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক জানান, বরাদ্দের কোনো তথ্য তাদের জানা নেই এবং ভোট কেন্দ্র মেরামতের কোনো কাজও তারা জানেন না।
প্রধান শিক্ষক জহুরুল হকের মুঠোফোনে ফোন করে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে, তিনি পরে ফোন করে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
ভোট কেন্দ্র মেরামতের বরাদ্দের টাকা ভাগাভাগি ও নামমাত্র কাজ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগের বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমির হোসেন বলেন, “আমি কোনো টাকা ভাগাভাগি বা অনিয়ম করি নাই। ভোট কেন্দ্র মেরামতের টাকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের চেক দিয়ে দেওয়া হয়েছে, টাকার ভাগ নেওয়ার সুযোগ নাই।”
ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নার্গিস ফাতিমা তোকদার বলেন, “আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি, এসব বিষয়ে আমার জানা নেই।”
এ বিষয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি নতুন এসেছি, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে নিয়ম মাফিক কাজ করার উচিত ছিল।”