।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে একটি রাস্তা নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতের আঁধারে অজ্ঞাত স্থান থেকে নিম্নমানের সামগ্রী এনে রাস্তায় ফেললে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। পরে সেখান থেকে সটকে পড়েন তারা। পৌর প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অনিয়ম হওয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে জোনাইডাঙা বটেরতল পর্যন্ত ৯৪২ মিটার রাস্তার দরপত্র আহ্বান করা হয়। রাস্তাটি পাকাকরণের দায়িত্ব পায় খুলনার মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩২ টাকা। মোস্তফা অ্যান্ড সন্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন লালমনিরহাটের শাহাদৎ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। কাজটির মেয়াদ চলতি মাসের ২৮ নভেম্বর শেষ হবে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সাব ঠিকাদার শাহাদৎ হোসেন দ্বায়সাড়াভাবে কাজ করছেন। গত এক বছর আগে রাস্তাটি খনন করে ফেলে রাখেন তারা। খননকৃত রাস্তায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর নিম্নমানের ইটের টুকরা ও বালু পড়ে আছে। সড়ক পাকাকরণে সাববেজে ১০ ইঞ্চি থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে ৬-৭ ইঞ্চি। বালু দশমিক আট (.৮) এফএম এর পরিবর্তে লোকাল দশমিক পাঁচ (.৫) বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির ৩৮এমএম ইটের খোয়া ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও সেখানে ৭৫ থেকে ১০০ এমএম থার্ডক্লাস ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয় বালু ও খোয়ার অনুপাতও ঠিক দেখা যায়নি।
এ দিকে, পৌরশহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডাক্তার নাজমা হাউজ থেকে বাংলালিং টাওয়ার পর্যন্ত ৬৭৫ মিটার আরসিসি ড্রেনের কাজেও নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২৬ টাকা ব্যয়ে কাজটি পেয়েছেন একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্স।
সেখানে দেখা গেছে, দেড় মিটার প্রস্ত ড্রেন নির্মাণে পাথরের সাইজ ঠিক নেই। বালুর এফএম দুই দশমিক পাঁচ (২.৫)থাকার কথা, কিন্তু দেওয়া হচ্ছে এক (১.০০) এফ এম। ঢালাইয়ের অনুপাত ঠিক নেই। পুরো ড্রেন হানিকম বের হয়েছে, যা আলাদা সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, সাব ঠিকাদার শাহাদৎ হোসেন প্রভাবশালী হওয়ায় এবং উলিপুর পৌরসভার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সঙ্গে কাজের অংশীদারিত্ত্ব থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার (০১ নভেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে কয়েকটি বড় বড় ট্রাকে করে খোয়া এনে রাস্তায় ফেলা হয়। এর মধ্যে কিছু অংশে আবার বালু দিয়ে ঢেকে দেয়। রাতের আঁধারে ঠিকাদারের লোকজনের এমন তুঘলকি কাণ্ড দেখে সন্দেহ হয়। পরে এলাকাবাসী কাজে বাধা দিলে তারা চলে যান।
এ বিষয়ে সাব ঠিকাদার শাহাদৎ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড সন্সের স্বত্ত্বাধিকারী শহিদুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমিও জানতে পেরেছি। উনি (সাব ঠিকাদার) যদি কাজের মান খারাপ করে তাহলে সেটি মানা হবে না।’
উলিপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি কিন্তু যাওয়া হয়নি। তবে আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে।’
