।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
চিলমারীতে সোমবার (১৪ অক্টোবর) গভীর রাত হঠাতেই নদী ভাঙন ও নদীর প্রবল স্রোতের শব্দে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসি এবং দ্রুত পরিবারের লোকজনদের বের করতে পারলেও ঘরের জিনিসপত্র রক্ষা করতে পরিনি চোখের সামনেই আশ্রয়ণের ব্যারাকসহ ঘরের সবকিছু নদীতে চলে যায়। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে কথাগুলো বলেন আশ্রয় নেয়া মুকুল মিয়া। তিনি আরও বলেন একটু পর বের হলে পরিবারের লোকজনসহ নদীতে চলে যেতাম আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন। একই কথা বলেন দীঘলকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম। তীব্র ভাঙনে গত ১ সপ্তাহ থেকে একের পর এক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নদী গর্ভে বিলীন হলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।
চিলমারীর অষ্টমীর চর ইউনিয়নের খোদ্দবাসপাতারি এলাকায় নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর জন্য দীঘলকান্দি নামে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করা হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তত্বাবধানে ২০২০-২১ অর্থ বছরে দীঘলকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্প ৭৪৩ মে.টন গম (যাহার মুল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা) বরাদ্দের মাধ্যমে মাটি ভরাট করা হয়। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উক্ত স্থানে ১শতটি পরিবারের জন্য ২০টি ব্যারাক নির্মাণ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে ২০ ব্যারাকের ১শতটি ঘর বুঝিয়ে দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত মানুষদের বুঝিয়ে না দেয়া হলেও নদী ভাঙনের শিকার হয়ে পুরাতন খোদ্দবাসপাতারী এলাকার প্রায় ৭০টি পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকের ঘরগুলোতে আশ্রয় নেয় এবং আশপাশের ৩০টি পরিবারও বাকি ব্যারাকের ঘরগুলোতে আশ্রয় নেন।
ভিটামাটি হারানো পরিবারগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার সাজালেও চলতি মৌসুমে হঠাতেই টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গত ১ সপ্তাহে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুটি ব্যারাকের কয়েকটি ঘর ব্রহ্মপুত্রের থাবায় বিলীন হয়ে যায় এবং বাকি ব্যারাকগুলোও পড়েছে হুমকির মুখে। ভাঙনের তীব্রতার কারণে আবারও সাজানো সংসার তছনছ হতে দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েছে বাসিন্দারা। আশ্রয় নেয়া আলম, মাহাম, রাশেদুলসহ অনেকেই বলেন, এক দেড় বছরেও হয়নি নদী ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সংসার শুরু করেছিলাম, কিন্তু নদী ভাঙন আবারও আমাদের সাজানো গুছানো সংসার কেড়ে নিচ্ছে। এসময় জামফুল বেগম বলেন, এতোদিনে আমাদের ঘর তো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি এর উপর ঘরগুলো নদীতে চলে যাচ্ছে কিন্তু প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন রোধে ব্যবস্থা তো নেয়ার দুরের কথা ভাঙন শুরু হওয়ার প্রায় ২ সপ্তাহ কেটে গেলেও কেউ খবর নিতেও আসেননি। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মাটি ভরাট কাজে অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে আশ্রয়ন প্রকল্পগুলোর স্থায়িত্ব হয় না ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে চলে যায়।
আশ্রয়ণের ব্যারাকগুলো ঝুঁকিতে আছে স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভার:) নঈম উদ্দিন বলেন, এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন স্থানে কথা বলেছি বাকি ব্যারাকগুলো ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/অক্টোবর/১৬/২৪