রোকনুজ্জামান মানু: উলিপুরে ৫৫টি মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখায় শিক্ষার্থী না থাকলেও ২২০জন শাখা শিক্ষক বছরের পর বছর ধরে বসে থেকে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা বেতন ভাতা নিচ্ছেন। ফলে সরকারের প্রতিবছর গচ্চা যাচ্ছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, জবাবদিহিতা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্র জানা যায়, উপজেলার ৪২টি দাখিল, ৬টি ফাজিল, ৬টি আলিম ও ১টি কামিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখায় প্রায় প্রতি বছর সাত হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়।
প্রতিটি মাদ্রাসায় এক জন ইবতেদায়ী প্রধান,একজন জুনিয়র মৌলভী,একজন ক্বারী ও একজন সহকারী শিক্ষক(ক্বারী)সহ ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ ভুতুরে শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাঠ্যপুস্তক নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাঙ্খিত শিক্ষার্থী না থাকায় কাগজে কলমে বিতরণ দেখিয়ে বই গুলো সরিয়ে রাখা হয় এবং শিক্ষাবর্ষের শেষে সেগুলো কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
গত বছর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ৫৫টি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য ৭ হাজার ২শত সেট পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ৬শত ৬৬ সেট পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হলেও ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় ১ হাজার ২শত ৭৭ জন পরীক্ষার্থীর তালিকা পাঠানো হলেও পরীক্ষায় অংশ নেয় মাত্র ৬শত ৩৭ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া অধিকাংশ মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংকটের কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী দেখিয়ে এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করানো হয়।
সরেজমিনে উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের রাজবল্লব দাখিল মাদ্রাসা,উলিপুর পৌরসভার মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় ,নারিকেলবাড়ি দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, এবতেদায়ী শাখা গুলো শিক্ষার্থী শুন্য। এ অবস্থা প্রায় অধিকাংশ মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠানের সুপারদের সাথে কথা হলে তাঁরা শিক্ষার্থী সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেন। রাজবল্লব দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মজিদ জানান উপজেলার মাদ্রাসাগুলোতে উপবৃত্তি কর্মসূচী এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর স্কুল ফিডিংয়ের বিস্কুট বিতরণের কার্যক্রম না থাকায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে চায় না। সে কারণে ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। যদি ও কিছু শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয় তাদের বেশির ভাগই পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত আসতে ঝড়ে পড়ে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রব মাদ্রসাগুলোতে শিক্ষার্থী সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। এছাড়া এবতেদায়ী শাখায় শিক্ষার্থী বৃদ্ধি করার জন্য মাদ্রাসা সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।