।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
বিল হোক, টিএ ডিএ বা ভাতা হোক কিংবা পিআরএল বা অবসর বিল ফাইল পাশ করতে গুনতে হয় কমিশন আর পারসেন্ট দিতে হয় ঘুষ। কমিশনের টাকা দিতে যত সময় লাগবে ফাইল নড়তে ততদিন সময় লাগবে এরপরেও ঘুরতে হবে দায়িত্বরতদের পিছে পিছে। এমনটাই ঘটছে চিলমারী হিসাব রক্ষণ অফিসে। ঠিকাদারী বিল হোক আর অফিসের বিল বা কাজের জন্য হোক কমিশন বা চা পান খাওয়া ছাড়াও মিষ্টির জন্য ঘুষ দেয়া লাগবে এমনকি অবসর ব্যাক্তিরাও কাজ করতে আসলে গুনতে হবে উৎকোচের টাকা। এই কমিশন বা উৎকোচ নেয়া যেন অধিকারের মতো হয়ে গেছে এই অফিসে। এছাড়াও সেবা নিতে আসা ব্যাক্তিরা পায়না ভালো ব্যবহার। উপজেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয় যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, চিলমারী উপজেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়টি দীর্ঘদিন থেকে দুর্নীতি ও ঘুষের আখড়ায় পরিণত হয়ে আছে। যেকোন বিল হোক না কেন, ঘুষ দিতে এক প্রকার বাধ্য করা হয় সেবা গ্রহীতাদের। অফিসের কর্মকর্তা, অডিটরসহ প্রায় সকল স্টাফ যেন অফিসটিকে কমিশন আর ঘুষ নেয়ার অফিস বানিয়ে ফেলেছেন। এই অফিসের দায়িত্বরত কিছু ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিলের পারসেন্ট বা কমিশনের বাণিজ্য। জিপিএফ হিসাব নম্বর খোলা, বেতন নির্ধারণ, বকেয়া বিল, জিপিএ চূড়ান্ত বিলসহ কোনোকিছুই মোটা অঙ্কের উৎকোচ ছাড়া পাশ হয় না এমন অভিযোগ সেবা নিতে আসা ব্যাক্তিদের।
বিলের সাথে কমিশন বা পারসেন্ট বেঁধে দেওয়া আছে এমন মন্তব্য করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, অফিস গুলোর বিভিন্ন বিল পাশ করতে গেলে আমাদের বিলের ২% থেকে ৫% টাকা হিসাব রক্ষণ অফিসে দিতে হবে, আর এই পারসেন্ট যত দ্রুত দেয়া হবে কাজ দ্রুত হবে, আর না হলে ঘুরতে ঘুরতে সময়ও যাবে আবার কমিশনও দিতে হবে।
আমরা তো সেবা দিতে টাকা নেই না, এমন মন্তব্য করে হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফ বলেন, হিসাবরক্ষণ অফিসের কাজ গুলো করতে গেলে টাকা না দিলে তা হবে না, টাকা দিতেই হবে। এসময় তারা আরও জানান, সরকার তো তাদের বেতন ভাতা দেন সেবা দেয়ার জন্য, তাহলে কেন কাজ করতে আবার তাদের ঘুষ দিতে হবে।
টাকা না দেয়ার কারণে তিনমাস ঘুরে কাজ হয়েছে জানিয়ে একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, সেটিও আবার কিছু গণ্যমান্য ব্যাক্তি আর মিডিয়ার ব্যক্তিদের সুপারিশে। কমিশন বা ঘুষ না দিলে বা অভিযোগ করলে পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে হুমকিসহ হয়রানী করা হয় বলেও ভুক্তভোগীরা নিরবে দুর্নীতিকে মেনে নিয়েই ঘুষ দিয়ে চলছেন বলে মন্তব্য করেন হয়রানীর স্বীকার ব্যাক্তিরা।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে প্রায় বিল গুলো পাশের জন্য মোটা অঙ্কের উৎকোচ ছাড়া পাশ হয় না এবং নড়ে না ফাইল।
প্রাথমিক শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, পিআরএল এবং অবসরের কাজ করতে গিয়ে তাকে টাকা দিতে হয়েছে এছাড়াও হয়রানী তো আছেই।
কাজ করতে গিয়ে তাকেও ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে জানিয়ে শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, বাহে হামরা কইলাম অফিসের লোকজন আবার হামার সমস্যা যদি করে। সমস্যা করতে পারে এবং কাগজ ঠিক থাকলেও তা কৌশলে সমস্যা সৃষ্টি করে হয়রানী হওয়ার ভয়ে শতশত ভুক্তভুগিরা মুখ খুলতে ভয় করেন জানিয়ে বিভিন্ন ভাতাভুগিসহ অনেকে জানান, যারা ঐ অফিসে কাজের জন্য যায় প্রায় সকলেই খরচ দিতে হয় এটাও সবার জানা আছে।
হয়রানীর শিকার ফাহমিদুল নামে এক যুবক বলেন, এই অফিসের তার বাবা ও মায়ের কাজ করতে গিয়ে একাধিকবার ঘুষ দিতে হয়েছে এবং ঘুরতেও হয়েছে।
কলেজ শিক্ষক নিজামুল ইসলাম বলেন, ট্রেজারী (হিসাবরক্ষণ) অফিসে একটি কাজ করতে গিয়ে হয়রানী শিকার হতে হয়েছে এবং টাকাও দাবি করেছিল পরে বিভাগীয় কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে কাজটি সমাধান হয়।
ভুক্তভোগী পিআরএল থাকা ও অবসরে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সারা জীবন শিখেয়ে আসলাম ঘুষ না নেয়ার কথা আর চাকুরীর শেষ সময় এসে কাজ করতে এখন ঘুষ না দিলে ট্রেজারী (হিসার রক্ষণ অফিস) থেকে ফাইল নড়ে না।
অবসরে এসেও সেই টাকা থেকে কমিশন আর ঘুষ দিতে হয় এই দুঃখ রাখি কই জানিয়ে শাহজাহান আলী বলেন, এগুলো বললে আবার কাগজে ভুল করে হয়রানী করে, তাহলে আমরা কি করবো।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো: শাহানুর ইসলাম বলেন, এমন কোন অভিযোগ আমি পাইনি আর কাজ করতে আসলে কেন টাকা দিবে তারা।
তিনি আরও বলেন, বিল পাশের জন্য অফিসের কেউ টাকা চাইলে সে যেন আমার কাছে আসে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/সেপ্টেম্বর/২৪/২৪