।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
চিলমারীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বরোপিট (খাল) দখল করে মাছের প্রজেক্ট করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ও বহিরাগত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও দখল করা ঘেরের ভিতর সরকারিভাবে মাছ ছেড়ে দেয়ায় মৎস্য অফিসের ভুমিকা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরোপিটটি উপজেলার পাত্রখাতা বাধেঁর পাশ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত বয়ে যাওয়া খালের উপর চিকন ব্রীজ এলাকায় প্রায় আধা কি.মি. দখল করে বাশেঁর ঘের দিয়ে ক্ষমতার প্রভাবে দখল করে নেয় মহলটি। উক্ত দখলকৃত এলাকায় স্থানীদের গোসোলসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম করতেও নিষেধসহ হুমকি দেয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। এছাড়াও বরোপিট খালের মধ্যবর্তী স্থান দখল করায় স্থানীয় লোকজন যাদের খালনির্ভর উপার্জন তারা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বরোপিটটি (খাল)উপজেলায় মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র থেকে পাত্রখাতা এলাকার বাঁধের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বরোপিটটি দীর্ঘ খাল হিসাবে পরিচিত এবং স্থানীয়দের মাছের নির্ভর খাল ও উপার্জনের মাধ্যম। স্থানীয়দের কাছে এটি খাল ও নালা নামে পরিচিত। এ খালে পাত্রখাতা, মিনাবাজার, বাধেঁর পাশের বাসিন্দা গরিব-অসহায় লোকজন উন্মুক্তভাবে মাছ শিকার করে পরিবারের মাছের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এর আগে একটি মহল মিথ্যা লিজের কথা বলে ভোগ দখল করে আসলেও ক্ষমতার পালা বদলে প্রকাশ হলে নতুন ভাবে কৌশল নিয়ে বরোপিটের মাঝখান দিয়ে খালের উপর চিকন ব্রীজ এলাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার অংশটি বাশেঁর ঘের দিয়ে বাঁধ সৃষ্টি করে মাছের প্রজেক্ট করেছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এতে খালের এ অংশে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে পড়েছে খালনির্ভর গরিব জেলেদের এবং নদী থেকে মাছ আসাও বন্ধ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বেশির ভাগ লোকে এ খালে ঝাঁকি জালসহ বিভিন্ন পদ্ধতি দিয়ে মাছ ধরতেন। গরিব লোকজন খালে মাছ ধরে দুই বেলা আহার করছে এটিও অনেকের সহ্য হচ্ছে না। যার কারণে গরীবের রুজির উৎসখ্যাত এই খালটি বাঁধ দিয়ে প্রজেক্ট করে গরিব মানুষগুলোর মাছ ধরার সুযোগটিও বন্ধ করে দিয়েছে। এটি খালনির্ভর স্থানীয়দের রোজগারে লাথি মারার মতো। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন না প্রকৃতপক্ষে এ খালটি কারা দখল করেছে।
স্থানীয় রমজান আলী, ফিরোজ, সামিউল আলমসহ অনেকে বলেন, কয়েকদিন আগে উপজেলা মৎস্য অফিসারসহ বিভিন্ন অফিসাররা এসে দখলকৃত এলাকায় উম্মুক্ত ভাবে মাছ ছেড়ে দিয়ে যায়। প্রায় আধাকিলো মিটার ঐ এলাকাটি ঘিরে নেন পাশ্ববর্তী এলাকার ইউসুফ আলীসহ তার সহযোগীরা। একটি দখলকৃত এলাকায় কিভাবে সরকারিভাবে পোনা অবমুক্ত করা হলো এমন প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেননা স্থানীয়রা।
যারা দখল করেছে তারা বলছে অফিস থেকে এটি ঘিরে রাখতে বলা হয়েছে এখানে কেউ মাছ ধরতেও পারবে না এবং গোছলের জন্য নামা যাবে না এমনটি জানান হাফেস ফরহাদ।
এ সময় শাহিদা নামে একজন বলেন, এখানে মাছ মেরে তাদের সংসার চলতো এবং কিস্তি দিতো এখন তা দখল হওয়ায় তারা পড়েছে বিপাকে।
বাঁধে বসবাসরত শহিদুল ইসলাম বলেন, নামে মাত্র কমিটি করে গরিব দু:খীদের মুখের খাবার কেড়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে মহলটি।
স্থানীয় নুর মোহাম্মদ, সামিউল ইসলাম, সাহেরা বেগমসহ অনেকে জানান, নালাটি ডেকে নেয়ার নাম করে প্রভাবশালীরা কমিটি বানিয়ে মৎস্য অফিসারের যোগসাজসে সরকারী ও প্রাকৃতিক মাছ ভোগ দখল করছে এবং দুই পার্শ্বে বেড়া দিয়ে লাল পতাকা দিয়েছে তারা।
বরোপিট দখল করে প্রজেক্ট করার মৎস্য উন্নয়ন কমিটির অর্থ সম্পাদক হাফেজ ওমর ফারুক বলেন, এখানে শরীফেরহাট এলাকার ইউসুফ আলীকে সভাপতি করে ১২২জনের কমিটি গঠন করা হয়েছে, মৎস্য অফিসের সাথে যোগাযোগ করে ২০০কেজি পোনামাছ অবমুক্ত করে নেয়া হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে ওই কমিটি গঠন করা হয়।
উপজেলা মৎস্য অফিসার মো: বদরুজ্জামান মিঞা বলেন, ওই এলাকায় সরকারিভাবে ২০০কেজি পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়েছে, নালায় বেরিগেট দিয়ে আটকানোর কোন নিয়ম নেই, তবে ওই এলাকার সুবিধাভোগী ১২২জনের নামের একটি তালিকা অফিসে জমা হয়েছে।
লিজ নেয়া হয়নি এমনটি জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, এটি স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ার কথা।
এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভার 🙂 নঈম উদ্দিন (সহকারী কমিশনার ভূমি চিলমারী) বলেন, বিষয়টি আমি ক্ষতিয়ে দেখবো।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/সেপ্টেম্বর/২১/২৪