।। নিউজ ডেস্ক ।।
চলন্ত বাইকে শুয়ে, বসে ও বিভিন্ন ভঙ্গিমায় মোটরসাইকেল চালিয়ে বিনোদন দিচ্ছেন কুড়িগ্রামের আজাদ আলী। তিনি কখনও মোটরসা্ইকেলেই করছেন খাওয়া-দাওয়া। বিগত ৪/৫বছর ধরে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারীর ব্যস্ততম সড়কে তিনি দক্ষ হাতে বাইক চালিয়ে এলাকাবাসীসহ পথচারীদের আনন্দের খোরাক যোগাচ্ছেন। তাকে কখনো পড়তে হয়নি দুর্ঘটনায়। আজাদ আলী তার মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে নামলেই বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ তার কসরত দেখতে রাস্তার দু’পাশে ভীর জমাচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা শহর ছেড়ে ধরলা ব্রীজের দক্ষিণ-পূর্বে ৭ কিলোমিটার গেলেই আজাদ আলীর বাড়ি। জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাটেশ্বরী ইসলামপুর গ্রামে স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। পেশায় দিনমজুর আজাদ আলী কৃষি কাজের পাশাপাশি সময় সুযোগ পেলে অটো চালিয়েও সংসার চালান। টানাটানির সংসার হলেও মোটরসাইকেল চালানোর নেশা তিনি ছাড়তে পারেননি। ছোট বেলা থেকেই একটি মোটরসাইকেলের স্বপ্ন দেখতেন। একসময় এনজিও থেকে ঋণ করে সাড়ে ১৬ হাজার টাকায় একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনেন। এরপর মডিফাই করে ২০০০ সালে শুরু করেন হাত ছেঁড়ে দিয়ে মোটরাসাইকেল চালানোর কাজ। পরে চলন্ত মোটরসাইকেলে শুয়ে, বসে ও বিভিন্ন ভঙ্গিমায় চালিয়ে সকলের নজর কাড়েন তিনি। তাকে নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও মিডিয়া কাজ করার পর আজাদ আলী এখন ইউটিউবে জনপ্রিয় একটি নাম। তার এই কসরত দেখে খুশি আশেপাশের মানুষ। তারা বলছেন ব্যস্ততম সড়কে বাইক চালালেও কখনো দুর্ঘটনায় পরতে দেখেননি তারা। দক্ষ হাতে মোটরসাইকেল চালান আজাদ আলী। তার এ ধরণের কসরতে খুশি এলাকার মানুষ। তবে দরিদ্র পরিবারের এই মানুষটিকে কোনভাবে সহযোগিতা করা গেলে পরিবারের দু:খ ঘোচানোর পাশাপাশি তিনি নিজেও মোটরসাইকেল চালিয়ে আনন্দ পেতে পারেন বলে অভিমত এলাকাবাসীর।
পাটেশ্বরী ড্রাইভার পাড়ার আলেকজন জানান, আজাদ সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। তাকে হ্যান্ডেলে হাত না দিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে দেখলে খুব মজা লাগে। আমরা সবাই হাসাহাসি করি। খুব ভালো চালায় সে।
ওই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মজিবর আলী জানান, আজাদ আলী একজন সহজ সরল মানুষ। মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেও আনন্দ পায়। অন্যদেরকেও আনন্দ দেয়। কিন্তু গরীব মানুষের সংসারে অভাব ঘোচানোর কোন লোক নাই। তাকে সহযোগিতা করলে ভালো হয়।
সৈয়দ আলী নামে একজন জানান, বেচারার কার্যকলাপ নিয়ে অনেক মিডিয়া শুটিং করে নিয়ে গেছে। তারা লাভবান হলেও আজাদ আলী কিছুই পায় না। অনেকে মোটরসাইকেল চালানোর তেলের টাকাটাও না দিয়ে চলে যায়।
এ ব্যাপারে আজাদ আলী জানান, ছোট বেলার মোটরসাইকেল চালানোর নেশাকে এখন কিছুটা পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই। কিন্তু পারিবারিক অস্বচ্ছলতা এখন বড় বাঁধা। বিনোদনের মাধ্যমে কিছু মানুষকে আনন্দ দিতে পারলেও পরিবারের দৈন্যতা কাটাতে পারছি না। ফলে শত কষ্ট বুকে নিয়ে মানুষকে খুশি করে যাচ্ছি। কেউ ডাকলেই বাইক নিয়ে ছুটে যাই। মানুষের ভালোবাসাই এখন আমার বড় প্রাপ্তি। কখনো কোন দুর্ঘটনায় পরিনি। পরিবার থেকে কিছুটা বাঁধা থাকলেও তারাও বিষয়টি মেনে নিয়েছে।
আজাদ আলী সম্পর্কে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, কোন জিও বা এনজিও থেকে তাকে সহযোগিতা করা যেতে পারে। এছাড়াও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে তাকে কাজ করার সুযোগ দিলে সে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারবে।