।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রাম শহরের যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ৪ তলার ছাদ থেকে রহস্যজনকভাবে পড়ে গিয়ে আমিনুল ইসলাম নামের ওটিবয় (অপারেশন থিয়েটারের সহকারী) গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুশয্যায় রয়েছে। আহত আমিনুল উলিপুরের যমুনা সরকার পাড়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর পুত্র।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, রবিদাস সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি ভূরুঙ্গামারী উপজেলা থেকে হার্নিয়া অপারেশনের জন্য যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। অপারেশন শেষে স্ত্রীসহ ক্লিনিকে অবস্থান করছিলেন। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টার দিকে রোগীর স্ত্রীকে গজ ব্যান্ডেজ দেয়ার কথা বলে তাকে ছাদে নিয়ে যায় ওটিবয় আমিনুল ইসলাম। সেখানে যাওয়ার পর রোগীর স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই নারী তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্যদের ফোন করে ক্লিনিকে আসতে বলে। এরও প্রায় দুই ঘণ্টা পর সকাল ৮টার দিকে ক্লিনিক সংলগ্ন বাড়ির মহিলা আমিনুলকে ক্লিনিকের পিছনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে ক্লিনিকের লোকজনকে ডাকে। এরপর ক্লিনিকের লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমিনুলের অবস্থার অবনতি হলে সেখানকার চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ক্লিনিকটিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা সেবা। ক্লিনিকের চারিদিকে দুর্গন্ধ ও পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা নেই। গ্রামের মানুষজন চিকিৎসা নিতে এসে বিভিন্ন সময় আর্থিকসহ নানা হয়রানির মধ্যে পড়ে। তবে আমিনুলের ছাদ থেকে পড়ে যাবার বিষয়টি রহস্যজনক বলেও জানান তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিকের ভর্তিকৃত রোগীর এক আত্মীয় জানান, এর আগে একই ওটিবয় এধরণের ঘটনা ঘটালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় নি।
ভুক্তভোগী নারীর সাথে কথা বললে তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমার স্বামীর অস্ত্রোপচারের পর ড্রেসিংয়ের জন্য গজ ব্যান্ডেজের প্রয়োজন হয়। এই গজ ব্যান্ডেজ দেয়ার কথা বলে ওটিবয় আমিনুল আমাকে ৪তলার ছাদে ডাকে। গজ ব্যান্ডেজ হাতে নেয়ার পর সে আমাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে জাপটে ধরে, আমি অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে নেমে এসে স্বামীসহ পরিবারের লোকজনকে জানাই। এরপরে ছাদে কী ঘটেছে তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমার পরিবারের লোকজনসহ ক্লিনিকের পরিচালক মিজু স্যারকে জানিয়েছি। আমি এর বিচার চাই।
কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার কবির হোসেন জানান, সকাল সোয়া আটটায় মেসেজ পেয়ে ঘটনাস্থল পৌঁছে ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া গুরুতর আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জরুরী বিভাগে পৌঁছে দেই। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিলো।
যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক সৈয়দ মজিবুল ইসলাম মিজুর সাথে কথা বললে ওটিবয় রোগীর স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার কথাটি তিনি অস্বীকার করেন এবং সাংবাদিকদের ভুল তথ্য প্রদান করেন। পরে পরিচালক মিজুর কক্ষে সাংবাদিকদের সামনে ভুক্তভোগী নারী বলেন, ওটিবয়ের অপকর্মের ঘটনাটি অনেক আগেই পরিচালককে জানানো হয়েছে। তখন পরিচালক মিজু সাংবাদিকদেরকে তথ্য গোপনের বিষয়টি স্বীকার করে সংবাদ না করার অনুরোধ করেন।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।