।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
চিলমারীতে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কার্ড ও খাদ্য বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইউপি সদস্যের স্ত্রীর ছাড়াও নামে-বেনামে কার্ড ইস্যু করে চাল আত্মসাত এবং খাদ্য বা চাল বিতরণের সময় টাকা উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নানা অভিযোগ এনে এ বিয়ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিযোগকারী।
জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মহিলা বিষয়ক দপ্তরের মাধ্যমে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট(ভিডব্লিউবি) প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় মোট ৩ হাজার ২২৩ জন অতি দরিদ্র মহিলাকে তাদের স্বনির্ভরতার জন্য সহায়তা হিসাবে মাসিক ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়। নিয়মানুযায়ী প্রতি ২ বছরের জন্য অতি দরিদ্র এই নারীদের পর্যাক্রমে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। ২০২৩-২৪ চক্রের খাদ্য বিতরণের লক্ষে বর্তমানে মহিলা বিষয়ক দপ্তর থেকে জুলাই ও আগষ্ট দুই মাসের খাদ্য বিতরণের জন্য ডিও দেয়া হয়।
জুলাই মাসের চাল বিতরণকালে সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) এক নামের কার্ড অন্য ব্যাক্তি নিয়ে আসায় তাদের খাদ্য প্রদান না করে ফেরত পাঠানো হয়। এসব অনিয়মের প্রতিবাদে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) লাল মিয়া নামে এক প্রাক্তন ইউপি সদস্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, থানাহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন আব্দুর রাজ্জাক মিলন তার পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য নুর আলম ও সংরক্ষিত সদস্য মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে ভিডব্লিউবি এর সুবিধাভোগী নির্বাচনে অনিয়ম করেছেন। অনিয়ম গুলোর মধ্যে ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য নুর আলমের স্ত্রী মোছা. বেবী বেগম এনআইডি-২৮২০৩৯৮৮০৪ এর নামে কার্ড ইস্যু করে খাদ্য উত্তোলন করা হচ্ছে। একই ওয়ার্ডের মুক্তা আক্তার এনআইডি-৭৮১৪৪৭০৩৫২ এর নামে কার্ড থাকলেও তিনি তা জানেন না সে বিষয়। শ্রীমতি সাধনা আইডি-৩২৭০৩৭০১৮৬, শ্রীমতি শাপলা রাণী এনআইডি-৫৫০৩৩২৩৪৯৪ এর নামে কার্ড আছে কিন্তু তারা জানেন না। এ সময় বেশ কয়েকজনের নামে কার্ড থাকলেও রয়েছে নানা অভিযোগ।
থানাহাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য নুর আলমের স্ত্রী বেবি বেগম এনআইডি-২৮২০৩৯৮৮০৪ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার নামে কার্ড আছে কি নাই তা তিনি জানেন না, মেম্বার জানেন।
তালিকায় থাকা শ্রীমতি সাধনা আইডি-৩২৭০৩৭০১৮৬ নামের সাথে থাকা মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে পুর্ণিমা রাণী নামের এক নারী ফোন রিসিভ করেন। তিনি জানান, গত চক্রে আমার নাম থাকায় এবারে আমার জা সাধনার আইডি দিয়ে কার্ড করে নিয়েছি।
মোছা. আমিনা বেগম এনআইডি-২৮২১২৫০৪৯১ জানান, তিনি ধামশ্রেনী এলাকায় থাকেন, তার নামের কার্ডটি তার মা কোন এক ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
অপরদিকে নয়ারহাট ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি এর চাল বিতরণের সময় সুবিধাভোগীদের নিকট হতে অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (০৮ সেপ্টেম্বর) নৌকায় খাদ্য বিতরণের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পরিষদের হিসাব সহকারী মো. নুরুন্নবী ও ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমান আলী খাদ্য বিতরণের সময় সুবিধাভোগীদের নিকট থেকে জন প্রতি ৫০টাকা করে উত্তোলন করছেন।
ইউপি সদস্য ইমান আলী জানান, পূর্বের নিয়মানুযায়ী কয়েকজনের নিকট থেকে ৫০টাকা করে তোলা হয়েছিল, পরে তা ফেরতদিয়েছি।
নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো.আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, ভিডব্লিউ’র খাদ্য বিতরণে পূর্বে টাকা নেয়া হয়েছিল। এবারে টাকা তুলতে নিষেধ করেছি।
থানাহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন তার ইউনিয়নের ভিডব্লিউবি প্রকল্পের উপকারভোগীর তালিকায় অনিয়মের প্রসঙ্গে জানান, এসব অভিযোগ আমাকে আগে কেউ দেয়নি, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ সোহেলী পারভীন জানান, অভিযুক্ত কার্ডের খাদ্য বিতরণ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মিনহাজুল ইসলাম জানান,অভিযোগ পেযেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/সেপ্টেম্বর/১৩/২৪