।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে ঝড়ে পড়া শিশুদের নিয়ে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা গত ৭ মাস ধরে বেতন বঞ্চিত রয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মানবেতরভাবে জীবন কাটছে তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে কুড়িগ্রাম জেলার ৬টি উপজেলায় ৪২০টি শিখন কেন্দ্রে ১২ হাজার ৬০০জন ঝড়ে পড়া শিশুকে নিয়ে এই প্রকল্পটি চালু করা হয়। ঝড়ে পড়া শিশু ও তার পরিবারকে বিভিন্ন সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভুদ্ধ করে মুল শিক্ষা ধারায় সংযুক্ত করতে কাজ করছে প্রকল্পটি। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৮৬১জন শিক্ষার্থীকে মূলধারায় সংযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ৭ হাজার ৭৩৯জন শিক্ষার্থী শিখন প্রকল্পে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়ণ করছে।
উল্লেখ্য, দেশে শতভাগ শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক পিইডিপি-৪ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। (পিইডিপি-৪) এর মূল লক্ষ্য প্রাক-প্রাথমিক হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিদ্যালয়গামী শিশুর একীভূত, সমতাভিত্তিক মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ছিন্নমুকুল বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম হেড সুশান্ত পাল জানান, রাজারহাট, উলিপুর, ভূরুঙ্গামারী, চিলমারী, রৌমারী এবং রাজিবপুর উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে বর্তমান ৪২০ জন শিক্ষক/ শিক্ষিকা, ৩৯ জন সুপারভাইজার, ৬ জন উপজেলা ম্যানেজার, ৬ জন অফিস সহায়ক ও ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বমোট ৪৭৮ জন গত ৭মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। বেতন ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দের অর্থ ছাড়ে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই সমস্যা হয়েছে। তবে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আমরা নিজস্ব ফান্ড ব্যবহার করছি। কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কার্যক্রমটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অর্থ ছাড়ের বিশেষ প্রয়োজন।
উলিপুর উপজেলার শিখন কেন্দ্রের শিক্ষক বিজয় লক্ষ্মী জানান, দীর্ঘ সাত মাস বেতন না পাওয়ায় ভীষণ সমস্যার মধ্যে পরে গেছি। আত্মীয়স্বজনরাও আর টাকা ধার দিচ্ছেন না, দোকানিও বাকি রাখা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ফলে খুব কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে।
রাজারহাট উপজেলার সুপারভাইজার উমর ফারুক বলেন, গত বছর ২৩ ডিসেম্বরে শেষ বেতন পেয়েছি। এরপর থেকে কোন বেতন পাইনি। এই চাকরিই আমার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু গত সাত মাস বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছি।
জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক (অ:দা:) সৈয়দ ফিরোজ ইফতেখার বলেন, বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী কুড়িগ্রাম জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সব উপজেলায় আইভিএ রিপোর্ট অনুযায়ী কেন্দ্র চলমান রয়েছে। তবে ডিসেম্বর-২৩ এর পরে আর কোনো অর্থ ছাড় হয়নি। আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি। তবে প্রকল্পের সফল সমাপ্তি ও সব শিক্ষার্থীকে মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে প্রকল্পটি ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত চলমান রাখা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।