উলিপুর :
কুড়িগ্রামের উলিপুর বুড়ি তিস্তা নদী অবৈধভাবে দখল করে মাছের ঘের, বাসাবাড়ি ও মার্কেট নির্মান অব্যাহত থাকায় ধীরে ধীরে নদীটি বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবু নির্বিকার কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ফলে বুড়ি তিস্তা দখল করে স্থাপনা নির্মান চলছে মহা উৎসবে। যে কারনে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পৌর শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে। “নদী বাঁচাও, অবৈধ স্থাপনা হটাও” এই দাবিতে উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল-নৌ যোগাযোগ পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি যৌথভাবে আন্দোলনে নেমেছে। তারা সোমবার (১৩ মার্চ) বুড়ি তিস্তা রক্ষায় মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়েছে।
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে উলিপুরের গর্ব ছিল বুড়ি তিস্তা নদী। চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো তিস্তা। তিস্তাকে কেন্দ্র করে উলিপুর বন্দর নামে খ্যাত ছিল। নৌকা ও ছোট জলজাহাজ আসত উলিপুরে ধান-পাট কেনার জন্য। পরবর্তী সময় তিস্তা নদী গতি পরিবর্তন করে পশ্চিম-দক্ষিন দিকে প্রবাহিত হওয়ায় মূল তিস্তা ধীরে ধীরে মরা নদী বা খালে পরিণত হয়। উলিপুর ও চিলমারীর মানুষের যাওয়া-আসার জন্য গুনাইগাছ রামদাস ধনিরাম (বর্তমান ব্রিজ) এলাকায় তিস্তা নদী পারাপারের জন্য খেয়াঘাট ছিল। ফলে গুনাইগাছের ওই এলাকায় তিস্তা নদী এখনও “খেওয়ারপাড়” হিসেবেই পরিচিত। ১৯৭২-৭৩ সালের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে থেতরাই ও দলদলিয়া এলাকায় মরা তিস্তার পশ্চিম মুখে একটি রেগুলেটর ও পূর্বদিকে আরেকটি রেগুলেটর নির্মান করে। মূল তিস্তার সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখা হয়। সেই সঙ্গে মরা তিস্তাকে খাল হিসাবে চালু রেখে কৃষি সেচ ও এলাকার মানুষের মৎস্য চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে ১৩৫ একর জমি অধিগ্রহন করে খালটি সংস্কার করা হয়। ১৯৮২ সালে তিস্তা নদী প্রবল ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। তখন থেতরাই কিশোরপুর রেগুলেটরটি নদীতে বিলীন হয়। পরের বছর ওই এলাকায় মরা তিস্তার মুখ বন্ধ করে দিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বাঁধ নির্মান করে। এই সুযোগে অবৈধ দখলদাররা নদী ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মান করছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উলিপুর পৌর সভার মেয়র তারিক আবু আলা চৌধুরী বলেন, রামদাস ধনিরাম মৌজায় খাস জমিগুলো অবিলম্বে অবৈধ দখলদারমুক্ত করা হবে। উলিপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সাঈদ সরকার জানান, পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে বুড়ি তিস্তা সুয়ারেজ লাইন হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি নদীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মান করছে। উপজেলার মানুষ অবৈধ দখলদার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানাবে।