।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে একই পরিবারে স্ত্রীদেরকে প্রতারিত করে পালিয়ে গেছেন স্বামীরা। প্রথমে মাকে বিয়ে করে এক বছরের সন্তানকে ফেলে পালিয়ে যান বাবা। পরে ওই কন্যা সন্তান বড় হওয়ার পর তাকে বিয়ে দেয়ার পর তারও এক বছরের কন্যা সন্তানকে রেখে পালিয়ে যায় স্বামী। একই পরিবারে মা ও মেয়েকে প্রতারণা করে স্বামীরা পালিয়ে যাওয়ায় হতবাক এলাকার মানুষ। এই ঘটনায় অসুস্থ্য হয়ে মেয়েটি মারা যাওয়ার পর তার মা ও তের বছরের কিশোরী সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পরেছে পরিবারটি। নানী ও নাতনী ছাড়া পরিবারে কোন পুরুষ মানুষ নেই। এখন দুজনের খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসা ও কিশোরীটির লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পরে গেছে।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভুষিরভিটা গ্রামের অধিবাসী মহেতন বেওয়া। তার ভাইয়েরা বাড়ির পাশে আড়াই শতক জমিতে মাথা গোজার ব্যবস্থা করে ধুমধাম করে বোনের বিয়ে দেন। কিন্তু মহেতনের কপালে সুখ ছিল না। কন্যা সন্তান শাহিনা খাতুনের জন্ম হওয়ার এক বছরের মধ্যে স্বামী আবুল হোসেন পরিবার ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে চলে যান। এরপর বিয়ে না করেই অনেক কষ্টে একমাত্র মেয়েকে মানুষ করেন তিনি। দুজনে মাটি কাটার কাজ করে থাকার ঘরটা ঠিকঠাক করেন। এরপর শাহিনা বড় হয়ে গেলে মামারা দিনাজপুরের এক ছেলের সাথে ভাগ্নির বিয়ে দেন। কিন্তু শাহিনারও কপালেও কোন সুখ ছিল না। তার কোলে যখন রুবিনা জন্ম নেয়; তার এক বছরের মাথায় স্বামী নুরনবী স্ত্রী শাহিনা এবং এক বছরের মেয়ে রুবিনাকে রেখে অজানার উদ্যেশে চলে যায়। শাহিনা দীর্ঘ বার বছর ধরে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করলেও সেই স্বামী আর ফিরে আসেনি। মেয়ের ভবিষ্যৎ ও নিজের এমন ছন্নছাড়া জীবনের জন্য খুব কষ্টে কাটছিল তার জীবন। চলতি জুলাই মাসের বন্যায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানা নেন শাহিনা। পুষ্টিহীনতা ও সুচিকিৎসার অভাবে বিধবা মা ও একমাত্র কন্যা সন্তানকে রেখে চির বিদায় নেয় সে। তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় অবস্থায় পরে গেছে। মা অসুস্থ্য মেয়ে মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণিতে পরে। সে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে ৩জনের মুখে আহার তুলে দিতো। এখন শাহিনা মারা যাওয়ার ফলে সংসারে আয়-রোজকার করার কোন মানুষ থাকলো না। ফলে এনিয়ে চিন্তিত এলাকার মানুষ।
মৃত: শাহিনার মামা নজরুল ইসলাম জানান, আমি নিজেই ঠিকমতো চলতে পারি না। এখন আমার বোন আর ছোট্ট নাতনিটা কিভাবে চলবে। ভাগ্নির ইচ্ছে ছিল নাতনীকে লেখাপড়া করার, অভাবে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।
শাহিনার আরেক মামা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি ঢাকা-চিটাগাংয়ে কাজ করতে গিয়ে দিনাজপুরের ছেলে নুরনবীর সাথে আলাপ হয়। ছেলেটা এতিম ছিল। আমার বোনের সংসারেও কোন পুরুষ মানুষ ছিল না। ফলে নুরনবীর সাথে ভাগ্নি শাহিনার বিয়ে দেই। কিন্তু নুরনবী আমার বোনের মতো ভাগ্নিকে ফেলে চলে যায়। শুনেছি চরে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে তাকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়।
শাহিনার মেয়ে রুবিনা জানান, আমার মা মারা গেছে। নানীও অসুস্থ্য টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। আমি লেখাপড়া করতে চাই। কিন্তু টাকার অভাবে আমার লেখাপড়া মনে হয় বন্ধ হয়ে যাবে।
নানী মহেতন বেওয়া জানান, বিধবা ভাতার ৬০০ টাকা দিয়ে কিভাবে সংসারটা চলবে। আগে মেয়ে ছিল কাজ করতো। এখন এই ছোট নাতনীকে নিয়ে আমার কি হবে!
এলাকার মেম্বার আব্দুর রহিম রিপন জানান, এই পরিবারটি অসহায় পরিবার। বৃত্তবানরা মেয়েটির লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলে পরিবারটির উপকার হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, পরিবারটির বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। মেয়েটির পড়াশুনা অব্যাহত রাখতে আমরা সব রকমের ব্যবস্থা নিবো।