।। নিউজ ডেস্ক ।।
মোর পাঁচ বেটা (ছেলে)। কাইও মোক দেখে না বাবা। মোর ঘর ভাঙা, বিছনা নাই, মশোড়ী নাই, বাতিও নাই। মশার কামড় আর গরমোত জেবন (জীবন) বেড়ে যায়। ঝড়ি (বৃষ্টি) আইসলে গাত (শরীর) পানি পড়ে। এ্যাগলা কোন বেটা দেখে না। মোর ভাতার ট্যাকা (টাকা) নাতি তুলি মাঝে মাঝে কয়টা করি দেয়। মোর বুড়া (স্বামী) কি থুইয়া যায় নাই? দুখ্যান বাড়ি ভিটা, আবাদী ভূই (জমি), গুইয়ার (সুপারী) বাগান, গাছগাছড়া সইগ থুইয়া গেইছে। বেটি ভারতী রানী, আরতী রানীর কথা না কও। বিয়া হওয়া পরার বাড়িত গেইছে। মোর পাঁচটা বেটা আছে বউ ছাওয়ার সবাইড়ে ভাত কাপড় হয়। খালি মোড়ে বেলায় হয় না। মন চাইলে কোন বেটা ভাত দেয়, না চাইলে না দেয়। মোর দুঃখ থোয়ার জায়গা নাই। বেটা বউ কাইও মোক দেখপার না পায়। ভগবান ক্যা যে মোক দেখে না। মুই মইলে (মারা গেলে) ওমার ভালো হয়। কান্না জড়িত কন্ঠে কথা গুলো বলেন, উলিপুর পৌরসভার নারিকেল বাড়ি সন্ন্যাসীতলা গ্ৰামের প্রভা বালা রানী (৭৫)। তার স্বামীর নাম মৃত সূধীর চন্দ্র হালাই।
প্রভা বালা রানী আরও বলেন, বাবা মুই সংসারোত খুব খাটচোং। বাপের বাড়ি থাকি গরু ছাগল বেঁচে সংসারোত আনছোং। মোর ভাতার (স্বামী) কয় তুই হিসেব বুঝিস না, ভূই মোর নামে নেং। মুই যদি জাননুং হয় মোর এ্যাইদেন দুরগেইত হইবে। মোর বাপের বাড়ির টেকা দিয়া মোর নামে ভূই নিনুং হয়। আজ মোর এতো কষ্ট হইলো না হয়। ভোক সহ্য করবার না পায়া এ বাড়ি ও বাড়ি দুইটা করি খায়া আইসোং। যাবার না পাইলে কাইও আসি দিয়া যায়। যাইক বাবা মোর কপালোত এ্যাগলা কষ্ট আছিল। ভগবান সউগ দেখপার নাগছে, ওমার বিচার তাই করবে।
রোববার (২৮ জুলাই) সরেজমিনে নারিকেল বাড়ি সন্ন্যাসীতলা গ্ৰামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রভা বালা রানী একটা ভাঙা জরাজীর্ণ ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরের ভিতর বসে সবজির তরকারি দিয়ে ভাত খাচ্ছে। ঘরে বিছানা নেই। বিদ্যুতের বাতি কিংবা ফ্যান নেই। যেকোন সময় ঘরটি ভেঙে পড়বে তার উপর। তাছাড়া ঘরের ভিতর এবং বাহিরে আগাছায় ভরপুর। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। দেখলে মনে হয় না ওখানে কেউ থাকে। ওই ঘরের ভিতরে ছোট ছেলে ভূলু চন্দ্র (৩৮) কিছু কাঠ স্তূপ করে রেখে দীর্ঘদিন ধরে শ্বশুর বাড়িতে থাকে। সে এখানে আসে না, কোন খোঁজ খবর নেয় না।
আপনাকে কে ভাত দিয়ে গেছে প্রভা বালা রানীকে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, ‘আজ মানুষ আসার কথা শুনছে সুধানে (ছেলে) ভাত দিয়া গেইছে।’
এসময় প্রভা বালার পরনে দেখা যায়, একটা ময়লা শাড়ি। মাথায় চুল এলোমেলো। তেল সাবানের অভাবে চুলে জট লেগে আছে। আর উকুনে ভরপুর মাথা।
এসময় কথা হয় ছেলে অভিনাথ চন্দ্র (৪৪) ও তার স্ত্রীর সাথে। তারা বলেন হামারে চলে না। তার তো আরও বেটা আছে।
সুধান চন্দ্র (৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মোর একলার দায়িত্ব। তার তো আরও বেটা আছে। বাবলু চন্দ্র (৬০) ও সুভাষ চন্দ্র (৫৫) অন্যত্র থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, সূধীর চন্দ্র হালাই মারা যাওয়ার পূর্বে নারিকেল বাড়ি সন্ন্যাসীতলা গ্ৰামে বাড়ি ভিটা ২৪ শতাংশ, আবাদী জমি ৬০ শতাংশ ও বাকরের হাট পূর্ব নাওডাঙ্গা এলাকায় ১৪ শতাংশ বাড়ি ভিট রেখে যান। সবকিছু তারা ভাগাভাগি করে নিলেও শুধু মা হয়ে সবার কাছে অবহেলিত।
ওই গ্ৰামের বাবলু চন্দ্র (৫৮) জানান, সব ছেলেরা বাপের জমিজমা ভাগ করে নিয়েছে। কিন্তু মায়ের খবর কেউ নেয় না। এদের কার্যকলাপে এদেরকে মানুষ মনে হয় না। এরা কারো কথা শুনে না। গ্ৰামে যেটা করছে মেনে নেয়ার মত নয়। এদেরকে গ্ৰাম থেকে বের করে দেয়া দরকার। একই ধরনের কথা জানালেন, নরেন চন্দ্র (৭২), চিত্ত রঞ্জন রায় (৬৫), ভোলা রায় (৪৪) সহ আরো অনেকে।
পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি, ঘটনা স্থলে যাবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জানলাম এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।