ভাঙ্গাগড়া-উত্থান-পতনের মাঝ দিয়ে এ আদি নদীটি প্রবাহিত হচ্ছে বহুকাল ধরে। এ নদীটিকে হিন্দু ধর্মমতে ‘পবিত্র’ নদী বলা হয়। কথিত আছে যে, দেবী পার্বতীর স্তন হতে এ নদীর জন্ম।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাংলাদেশের নদ-নদী সমূহের হাইড্রোলজিক্যাল প্রতিবেশ অঞ্চলকে মোট ১৭টি হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলে ভাগ করেছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫৭ টি সীমান্ত ও অভিন্ন নদ-নদীর তালিকা তৈরি করেছে। ৩টি বাদে বাকী ৫৪টি নদ-নদী ভারত থেকে প্রবাহিত। বাংলাদেশের এই আন্তঃরাষ্ট্রিক প্রধান অভিন্ন সীমান্ত নদীসমূহের ভেতর তিস্তা চতুর্থতম। প্রাতিষ্ঠানিক নদীবিজ্ঞান অনুযায়ী বাংলাদেশের নদীসমূহকে প্রধান, উপনদী, শাখা নদী, স্বাধীন নদী নামে ভাগ করা হয়। এর ভেতর তিস্তা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে একটি উপনদী। তিস্তা নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কি.মি.। উত্তর-পশ্চিম হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলের ৯৬টি নদীর ভেতর তিস্তার আইডি নাম্বার ১৩১।
উৎপত্তি :- সিকিম এবং তিব্বতের সংয়োগকারী পর্বত অঞ্চলে সো-লামু/চালামু/লাহামো লাৎসা পাহাড়ি হ্রদের অবস্থান। উত্তর সিকিমের ৬.৫ কি.মি দীর্ঘ এবং ২.৫ কি.মি প্রশস্থ এই পবিত্র হ্রদ থেকেই তিস্তার জন্ম। স্থানীয়দের কাছে এই হ্রদ তিব্বত রক্ষাদেবীর জীবন-হ্রদ হিসেবে বিবেচিত। সমুদ্র সমতল থেকে ১৭,৪৮৭ ফুট উঁচুতে হিমালয় পর্বতের সো-লামু হ্রদ ছাড়াও গুরুডংমার হ্রদও তিস্তার আরেক জননী।
নামকরন:- সিকিম পাহাড় থেকে নেমে এই জলধারা রাংগিত নদী নামে প্রবাহিত হয়ে জলপাইগুড়িতে পূর্বদিকে করতোয়া, পশ্চিমে পূনর্ভবা এবং মধ্যে আত্রাই নামে তিনটি ভাগে প্রবাহিত হয়েছে। তিনটি স্রোতস্বী নদীর মিলিত রূপকেই ‘ত্রিস্রোতা’ হিসেবে ডাকতে ডাকতে একসময় নদীটির নাম তিস্তা হয়ে যায় বলে অনেকের ধারণা করা হয় ।প্রবাহিত অঞ্চল:- সিকিম থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলার ছাতনাই এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ডিমলা, পাটগ্রাম, জলঢাকা, গংগাচড়া, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, কাউনিয়া, রাজারহাট, লালমনিরহাট, চিলমারী, সুন্দরগঞ্জ, পীরগাছা ও উলিপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীর কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে এই নদীটি ।এই মূল তিস্তা ছাড়াও উত্তর-পূর্ব হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলের আরও দুটি নদীর নাম তিস্তা। এদের একটি বুড়ি তিস্তা নামে এবং আরেকটি মরা তিস্তা নামে প্রবাহিত।
বুড়ি তিস্তা ও মরা তিস্তার প্রবাহ তট:- রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল থেকে উৎপন্ন এবং বদরগঞ্জের যমুনেশ্বরী নদীতে মিলিত হওয়া ১৮ কি.মি. দৈর্ঘ্য এবং ২০ বর্গ কি.মি অবববাহিকার একটি নদীর নাম মরাতিস্তা যার (আইডি নাম্বার-২৪৮)। সীমান্ত নদী বুড়ি তিস্তা (আইডি নাম্বার-১৮৮) নীলফামারীর ডোমার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে জলঢাকা এলাকায় তিস্তার সাথে মিলিত হয়েছে। বুড়ি তিস্তার দৈর্ঘ্য ৩৫ কি.মি. এবং মোট অববাহিকা ৭০ বর্গ.কি.মি.।প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ‘বুড়িতিস্তা’উলিপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী নদী। যা একসময় প্রমত্তা ছিল। ১৮৯৮ সালের ভূমিকম্পে নদীটি তার যৌবন হারিয়ে মৃতপ্রায় হতে থাকে।এখন প্রশ্ন আসতেই পারে তবে উলিপুর যে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে তার নাম কি.? বুড়ি তিস্তা না আদি তিস্তা। আসলে এ নদীটি আদি তিস্তা কিন্তু কালের পরিক্রমা ও এই এলাকার সহজ সরল মানুষদের মাধ্যমে এটি বুড়ি তিস্তা নামে পরিচিত হয়েছে।
যে নদীটি উলিপুর উপজেলা গঠণ ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলো তাকে কতিপয় ভূমিখেকোর জন্য মৃত হতে দিতে পারিনা আপন সংস্কৃতি ভাষা কৃষ্টি ও ঐতিহ্য কে কতিপয় মানুষের হাতে মরতে দিতে পারিনা। তাই আসুন ‘বুড়ি তিস্তা/আদি তিস্তা বাঁচাই উলিপুর কে বাঁচাই। ”
অতীতেও এমন অনেক সভ্যতা আছে যারা লোভের বশবর্তী হয়ে নদীকে মেরে ফেলে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে (মহিনদাজারো সভ্যতা যেমন)। আমরা তা করতে চাই না আমরা এই বুড়িতিস্তা বাঁচিয়ে রাখতে চাই, উলিপুর কে বাঁচাতে চাই,উলিপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে চাই ।
মিনহাজ মিজান,
কার্যকরী সদস্য,রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি,উলিপুর উপজেলা শাখা