।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
রাজিবপুরের ভেলামারী, শংকর মাধবপুর, শিকারপুর, নাওশলা, কিত্তনতারী, আনন্দ বাজার, পাখিউড়া, চর সাজাইসহ প্রায় ২০টি চর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। শুধু চরাঞ্চলই নয় প্লাবিত হয়েছে উপজেলা সদরের ফাটক পাড়া, মুন্সি পাড়া, মদনের চর, করাতিপাড়া, সবুজবাগ, মেম্বার পাড়া, টাঙ্গালিয়া পাড়া ও রাজিবপুর উপজেলা পরিষদসহ আরও প্রায় ১০টি গ্রাম। এতে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে এসব এলাকার মানুষজন।
শুক্রবার ও শনিবার (৫ ও ৬ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িই প্লাবিত হয়েছে। বাড়ি ছাড়া হয়েছে অনেক পরিবার। যারা বন্যার পানির সাথে যুদ্ধ করে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে তাদের অনেকের বাসায় জ্বলেনি চুলা।
ভেলামারী চরের এমন একজন নারী করিমন বেওয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, চারদিকে বানের পানিতে টইটম্বুর। প্রতিবেশীরা অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আমি যেতে পারছি না। রান্না করার কোনো সুযোগ নাই। চিঁড়া মুড়ি খেয়ে দিন যাচ্ছে।
একই এলাকার ফজল হক নামের একজন বলেন, বন্যার পানির স্রোতে বাড়িঘর ভেসে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমরা বাড়ি ছেড়ে উচু জায়গায় যাচ্ছি। বন্যায় আমাদের ফলানো সব ফসল তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। গবাদি পশু নিয়ে আমাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। আমরা সব চেয়ে বেশি বিপাকে পরেছি গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে।
এদিকে বন্যায় প্লাবিত হয়ে উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। রাজিবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফ উজ্জামান বলেন, বন্যায় প্লাবিত হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। তবে এইচএসসি পরীক্ষা চলমান থাকবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রতন মিয়া জানান, বন্যায় ৭৯৮ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার প্রায় কৃষক।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য মতে, ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে বর্তমান ২৪.০২ সেন্টিমিটার রয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।
রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, শুক্রবার আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কোদালকাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৩০০ পরিবারকে শুকনো খাবার এবং ৪০০ পরিবারকে ১০কেজি করে চাউল বিতরণ করেছি। আজ (শনিবার) আমরা মোহনগঞ্জে যাবো ত্রাণ সহায়তা দিতে। আমরা সব সময় জনগণের পাশে আছি।
রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদ বলেন, গত দুই দিন থেকে আমরা প্লাবিত এলাকাগুলোতে গিয়ে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি। যাদের বাড়িতে থাকার কোনো অবস্থা নেই তাদের জন্য আমরা উপজেলা পরিষদে থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছি। তারা চাইলে এখানে এসে থাকতে পারবে। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে।
//নিউজ/রাজিবপুর//সুজন-মাহমুদ/জুলাই/০৬/২৪