।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কোনো কোনো নদ-নদীর পানি কমলেও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। এতে করে নদী তীরবর্তী ৬টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। বেড়েই চলেছে বানভাসীদের দুর্ভোগ। সরকারি সহায়তা পৌছে নি সর্বত্র।
জেলায় ২য় দফা বন্যার ফলে ৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। ২ হাজার ৩শ’ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত এবং বানভাসীদের সহায়তায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩ টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন থেকে ৫শ’ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাক টাকা বিতরণরে জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে স্থানীয় পাউবো সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে বিকেলে হাতিয়া পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৭৮ সেমি ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেমি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পরেছে বানভাসী মানুষ। তারা ছুটছে আশ্রয়ের খোঁজে। বেশিরভাগ বানভাসী মানুষ নৌকার মধ্যে রাত্রি যাপন করছে। সরকারি প্রশাসন থেকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও এখনো সবার কাছে পৌছেনি সরকারি সহায়তা।
জেলায় গত চারদিন ধরে নদনদীগুলোতে অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধির ফলে গরু-ছাগল, সহায়-সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে বানভাসী মানুষ। ঘরের ভিতর পানি প্রবেশ করায় যাদের নৌকা আছে তারা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। যাদের নৌকা নেই তারা ঘরের ভিতর মাচা ও চৌকি উঁচু করে সেখানেই আশ্রয় নেয়। রান্নাবান্না করে সেখানেই। আশে পাশে যত উঁচু বাড়ি ও ফ্লাড শেল্টার রয়েছে, সেখানে আশ্রয়ের খোঁজে ছোটে বানভাসী মানুষ। এই রকম পরিস্থিতিতে মাঠে থাকা পাট, সবজি, তিল, তিসিসহ কৃষিজাতীয় ফসল পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। এভাবে কিছুদিন থাকলে বিনষ্ট হওয়ার আশংকা করছে চাষীরা।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা গ্রামের হামিদা বেগম জানান, বাড়িঘরে পানি ওঠায় বাচ্চাদের নিয়ে খুব বিপদে আছি। অনেক কষ্টে চৌকির উপরে রান্না করছি। আনাজ তরকারি ডুবে যাওয়ায় বেশি কিছু রাঁধতে পারছি না।
একই গ্রামের আজিজুল জানান, বন্যায় গরুবাছুর নিয়ে খুব বিপদে আছি। পানিতে রইছে গরু। ঠিকমতো খাবার দিতে পারছি না।
পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কালির আলগা গ্রামের হাসনা বেগম জানান, পুরো ঘরের ভিতর পানি। থাকতে না পেরে ছোট নৌকায় আশ্রয় নিয়েছি। কিছু রান্নাও করতে পারছি না। ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা খুব বিপদে আছি।
ভুক্তভোগী বানভাসীদের মাঝে চাল-ডাল ও তেল বিতরণ করতে গিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকুল আলম হালিম জানান, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যাদের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছি। নিজেরাও ঘুরে ঘুরে দেখছি। বন্যা কবলিত সকল পরিবারকে আমরা খাদ্য সহায়তা প্রদান করছি। যতদিন বন্যা থাকবে ততদিন এই সহায়তা আমরা অব্যাহত রাখবো।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান, বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা ছাড়াও ৮৩টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ২০ হাজার খাবার স্যালাইন বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চলমান বন্যায় ২হাজার ৩শ হেক্টর ফসলী জমিন নিমজ্জিত হয়েছে। বিশেষ করে পাট, রোপা আমন বীজতলা, আউশ ধান, শাকসবজি, তিল, তিসি, চিনা, কাউন ফসল তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩৭টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানির কারণে আরও বিদ্যালয় বন্ধ হতে পারে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী, বামনডাঙ্গা, নুনখাওয়া, সদর উপজেলার যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, পাঁচগাছী, মোগলবাসা, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ, চিলমারী, রমনা, অস্টমীরচার, রৌমারী উপজেলার বন্দবের, চর শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা, যাদুরচর ও চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ ও চর রাজিবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বন্যার্তদের সব ধরণের সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাজ চলমান রয়েছে।