।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ৩টি রাস্তা সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও ধীরগতিতে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া রাস্তার একটি রিং কালভার্ট ভেঙে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারীরা। তবে এসব বিষয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের।
জানা গেছে, ২০২২ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো রাস্তা পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬’শ ৪৫ মিটার উলিপুর পৌরসভার সীমানা পিলার (মুন্সিপাড়া) থেকে হাতিয়া ইউনিয়নের বাগুয়া অনন্তপুর জিসি সড়ক, ৫ হাজার ৭’শ ৪০ মিটার কে, সি রোড মোহাম্মদের দোকান থেকে তবকপুর আদর্শ বাজার বাহারেরঘাট আর এন্ড এইচ সড়ক এবং ৩ হাজার ৮’শ ৯৮ মিটার উলিপুর পূর্ব বাজারের আজমের মোড় থেকে রাণীগঞ্জ চৌমোহনী পর্যন্ত সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে। কাজের দায়িত্ব পায় কুড়িগ্রামের রব-আরসি-এইচটি-জেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
একটি প্যাকেজে ১৬ হাজার ২’শ ৮৩ মিটার ৩টি রাস্তার সংস্কার কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৮টাকা। কিন্তু কাজের শুরুতে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
একটি সূত্র জানায়, কাজের শুরুতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করায় সেই সময় দায়িত্বরত উপজেলা প্রকৌশলী বিল না দিলে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি বদলী হয়ে চলে যান। কিন্তু উৎকোচের বিনিময় যোগদান করেই দুর্নীতিবাজ উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের ৫০ শতাংশ বিল প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। তবে উলিপুর উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার জানান, যেসব কাজে ত্রুটি ছিল সেগুলো ঠিক করে নেওয়ার পর বিল প্রদান করা হয়েছে।
সরেজমিনে একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার মাস আগে রাস্তার কার্পেটিং তুলে ফেলে রাখা হয়। পরে সেগুলো কোনোরকম রোলার করে তার ওপরে বিভিন্ন কোয়ালিটির ইটের টুকরা বিছানো হয়। রাস্তায় তিন ইঞ্চি খোয়া সর্বোচ্চ ২ ইঞ্চি সাইজের বিছানোর কথা থাকলেও তা যথাযথ মানা হয়নি। খোয়া ৯০% এবং বালু ১০% থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে বালুর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সেখানে ৪০% কাদা মাটি মিশ্রণে ডব্লিউএমএম করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াত করায় সড়কে উঁচু-নিচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এজিংয়ে দুই নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়। যা এখানে কিছু সংখ্যক ইট নষ্ট হয়ে গেছে।
এছাড়া বাগুয়া অনন্তপুর রোডের গাইডওয়াল নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক মিটার গাইডওয়াল মধ্যে হাফ মিটার ১৫ ইঞ্চি এবং হাফ মিটার ১০ ইঞ্চি গাথুনি দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। গাইড ওয়াল নির্মাণে নিম্নমানের রড ব্যবহার করা হয়েছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, হাতিয়া ইউনিয়নের কদমতলা বাজারের পাশে একটি রিং কালভার্ট ভেঙে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা সংস্কার করা হয়। কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় কদমতলা ও চিড়াখাওয়ার পাড় এলাকার শতাধিক একর আবাদি জমি এবং বসতবাড়িতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয়রা ভেঙে ফেলা রিং কালভার্টটি অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে রাস্তার মাঝখানে গর্তের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে যাতায়াত করছেন পথচারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাতিয়া মেলার বাসিন্দা এক প্রসূতি বলেন, ‘বাড়ি থেকে ব্যাটারিচালিত মিশু রিকশা নিয়ে উলিপুর যাচ্ছি। কিন্ত রাস্তাটি চলাচলের একদম অনুপযোগি। রিকশায় বসে থাকা যায় না। মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে পড়ে যাই।
অটোরিকশাচালক আব্দুল খালেক (৪০), দুলাল মিয়া (৩০) সহ কয়েকজন জানান, এই রোডে প্রতিদিন তিন শতাধিক অটোরিকশা যাতায়াত করে। কিন্তু এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টের। রাস্তায় উঁচু-নিচু ঢেউয়ের কারণে ব্যাটারিরও সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার আব্দুল হামিদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ ছিল। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।
তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, রাস্তার কাজ ভালো হচ্ছে না। বলতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন রাজনৈতিক নেতাদের পাওয়ার দেখান এবং ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
রাস্তাটির সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ থাকার কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাস্দুুজ্জামান বলেন, এর প্রেক্ষিতে তদন্ত করা হয়েছে।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/জুন/৩০/২৪