।। নিউজ ডেস্ক ।।
চলতি বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৩শ ২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে পাট, আউশ ধান, চিনা, কাউন, আমনের বীজতলা, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি। পানি দ্রুত নেমে না গেলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ২১ জুলাই (শুক্রবার) থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দ্রুত কমছে নদ-নদীর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, ২২ জুন (শনিবার) বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর পানি কমে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে পানি কমলেও নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পানি এখনো নামেনি। এসব এলাকার বাড়ির পাশ দিয়ে পানি অবস্থান করছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তারা নৌকা এবং ভেলা দিয়ে যোগাযোগ করছে। এসব চরাঞ্চলের ফসল এক সপ্তাহ থেকে পানিতে ডুবে রয়েছে। ফলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।
নাগেশ্বরীর বল্লভেরখাস ইউনিয়নের ফান্দের চরের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, বানের পানিতে তার পাট এবং সবজিসহ আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বিশেষ করে আমনের বীজতলা নষ্ট হলে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়বেন তারা।
একই এলাকার দুলু মিয়া বলেন, তার বাড়ি নিচু এলাকায় হওয়ায় পাঁচ দিন হলো পানি উঠেছে। এ কয়দিন থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো মতে রাতদিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া বাড়ির আশে পাশে লাগানো সব সবজির গাছ মরে গেছে।
রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর, দাঁতভাঙ্গা, শৌলমারী ও চরশৌলমারী ইউনিয়নের নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ধান ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় বিশেষ করে বিপদে পড়েছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা। পাশাপাশি গাে খাদ্যের তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে বারবান্দা, বেড়ামারা, পাখিউড়া, বােয়ালমারী, নতুন শৌলমারী, চরবােয়ালমারী, ডাঙ্গুয়াপাড়া, গুছগ্রাম, ইটালুকান্দা, কাউনিয়ারচর, ছাটকড়াইবাড়ী, ধনতলা, চরধনতলা, শান্তিরচর, ভুদুরচর, নামা বারবান্দা, ইজলামারী, ইছাকুড়ি, পাটাধােয়াপাড়া, চর ইজলামারী, খেওয়ার চর, বকবান্দা, আলগারচর, পােলারচরসহ ৫টি ইউনিয়নের নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হেক্টর পাকা ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
বকবান্দা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাগাে (আমাদের) পাকা ধান ক্ষেত বৃষ্টির পানিত তলাইয়া (ডুবে) গেছে। ধান কাটার কামলা পাওয়া যায় না। কামলার দাম ১ হাজার থেকে ১২শ টাকাতে কাজ করছে না তারা। আমরা গরিব কৃষক এত টাকা পামু কই। সারাবছর এই আবাদ দিয়ে চলে আমাগো।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চলতি বন্যায় জেলায় ১৩শ ২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা শেষে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, সব নদ-নদীর পানি কমছে। দু-একদিনের মধ্যে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এছাড়াও জেলার ৫-৬টি পয়েন্টে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৪৪ মেট্রিকটন জিআর চাল ও নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসেবে উপবরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।