।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে ঈদকে ঘিরে বেড়েছে কামারদের ব্যস্ততা। ক্রেতারা খুঁজছেন শান দেয়া ঝকঝকে দা ও ছুরি। কেউ কেউ পরখ করে নিচ্ছেন ঠিকমতো হার কাটবে কি না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কামারপাড়ায় ঝনঝন শব্দ জানান দিচ্ছে তাদের কাজের ব্যস্ততা। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্মকাররা ক্ষতিকর যন্ত্রপাতির অপব্যবহার করতে দেননা বলে জানিয়েছেন।
এক সময় কৃষিকাজ, বাড়িঘর মেরামত ও গৃহস্থালী কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল কামারদের। ব্যবসাটা তখন ছিল জমজমাট। হাল আমলে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সেই পেশা এখন কোনঠাসা হয়ে পরেছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও গ্রামে গ্রামে ছিল কামারদের অবস্থান। এখন কাঁচামালের মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের কারণে শতশত মানুষ পেশা পরিবর্তন করেছে। তবে কামারদের দক্ষ হাতের কাজের এখনো জনপ্রিয়তা রয়েছে। যতটা না রেডিমেড দা-ছুরির ব্যাপারে। ফলে কোরবানি এলেই আবার লোকজন ছুটে আসেন কামারদের কাছেই। এই ছুরি বা দা দিয়ে কোরবানি দেয়া গরুর যেকোনো হাড় বা শক্ত মাংস সহজে কাটাকাটি করা যায়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় না তাদেরকে। গুণগতমানের কারণে এখনো মানুষ তাদের কাছে আছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী বাজারের সবচেয়ে পুরাতন কর্মকার মোজাম্মেল হক জানান, প্রায় ৩৬ বছর ধরে এই পেশায় আছি। পেশাটার প্রতি মায়া পড়ে গেছে। ছাড়তে পারি না। এখন ১২/১৩ টাকার কয়লা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। ৩০ টাকা কেজির লোহা কিনতে হচ্ছে একশ টাকার উপরে। সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের তৈরি জিনিসপত্রের দাম তেমনটা বাড়েনি। ফলে অল্প লাভেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা ভবেন ও খগেন দুই ভাই প্রায় ৩৪ বছর ধরে কাজ করছেন। পাশেই কাজ করছেন তাদের গ্রামের কৃষ্ণমোহন। তারা জানান, এক সময় ছিনাইতে ২৫ ঘর লোক কামারের পেশায় নিয়োজিত ছিল। এখন ৮ থেকে ১০ জন এই পেশায় আছে। বাকিরা অন্য পেশায় চলে গেছে।
এসব যন্ত্রপাতি তৈরি করতে প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেয়া লাগে কি না, এ ধরণের প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, এসব যন্ত্রাদি তৈরি করতে তাদেরকে কারও কাছ থেকে কোনো অনুমতি নিতে হয় না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হয় এমন যন্ত্রপাতিও তারা কখনো তৈরি করেন না। শুধুমাত্র সাংসারিক ও মাঠের কাজে ব্যবহার করা যায় এমন জিনিসই তৈরি করে আসছেন তারা যুগের পর যুগ ধরে।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, অর্থনৈতিক সংকট, র-মেটেরিয়ালসের উচ্চমূল্য এবং সামাজিকভাবে মর্যাদা না পাওয়ায় অনেকে পেশা পরিবর্তন করছেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই পেশার সাথে যারা জড়িত তাদের পাশে দাঁড়ানো। তিনি আরও জানান, কুড়িগ্রাম সদরে প্রায় ৮০ জন কামার রয়েছে। পুরো জেলা জুড়ে কামার রয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকুল আলম হালিম জানান, যেহেতু ইক্যুইমেন্টগুলো ধারালো, সেগুলো যেন খারাপ মানুষের হাতে না পরে। এজন্য মোটিভিশনাল কথাবার্তার পাশাপাশি আমাদের নজরদারিও থাকে কামারদের কার্যক্রমের প্রতি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো খারাপ রিপোর্ট আসেনি। তারপরও আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকি যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারকৃত জিনিসগুলো যেন খারাপ কাজে ব্যবহার করা না হয়।