।। নিউজ ডেস্ক ।।
রাজারহাটে পেকিং রাজহাঁস পালনে সফলতা পেয়েছে বাপ-বেটার খামার। শুভ্র সাদা রঙের ঝকঝকে হাঁসগুলো যখন পাখনা মেলে পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায় তখন মুগ্ধ চোখে হাসঁগুলো দেখেন এলাকাবাসী। খামারের মালিক আব্দুল আজিজ করোনার সময় চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তারপর বিভিন্ন ধরণের কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু অভাব তাকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল। পেকিং বা স্থানীয়ভাবে প্রচলিত বেলজিয়াম রাজহাঁসের খামার গড়ে তুলে ভাগ্য ফেরাতে সফল হয়েছেন তিনি। পিতা-পূত্র মিলে গড়ে তোলা খামারের নাম দিয়েছেন বাপ-বেটার খামার। এই খামারের নাম এখন সকলের মুখে মুখে।
আব্দুল আজিজ জানান, অনেক জাতের রাজহাঁস পালন করেছি কিন্তু লোকসান ছাড়া লাভের মুখ দেখিনি। পরে স্থানীয় আরডিআরএস সংগঠন থেকে পেকিং রাজহাঁস পালন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পাই। তারাই প্রথম আমাকে ৫০টি পেকিং রাজহাঁসের ছানা বিনামূল্যে সরবরাহ করেন। ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে এখন আমার খামারে ১৫২টি খাওয়ার উপযুক্ত রাজহাঁস আছে। তারা ডিমও দিচ্ছে। একহালি ডিম প্রায় দুশো টাকায় বিক্রি করছি। লোকজন ডিম কিনে নিয়ে প্রয়োজনীয় তা দিয়ে ২৮ দিনের মধ্যেই বাচ্চা পাচ্ছে। সেই ফুটে ওঠা বাচ্চাগুলোকে দুই থেকে আড়াই মাস খাবার দিলে খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এ সময় তাদের ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতিটি রাজহাঁসের কেজি ৬শ’ টাকা । ফলে একটি রাজহাঁস কিনতে খরচ পড়বে ১৫শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা।
আব্দুল আজিজের স্ত্রী রোজিনা বেগম জানান, ঘর মেরামত করতে আমাদের দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া খাদ্য, ঔষধ, ভ্যাকসিন প্রয়োগে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাগে। আমরা এখন ডিম, বাচ্চা ও বড় হাঁস বিক্রি করতে পারছি। রাজহাঁস পালনের জন্য বাড়ির পেছনে ১৪ হাজার টাকায় তিন বছরের জন্য বিল বন্ধক নিয়েছি। সকালে খাবারের পরে হাঁসগুলোকে বিলে ছেড়ে দেয়া হয়। দুপুরের খেতে এসে আবার ছেড়ে দেয়া হয়। সূর্য ডোবার আগে আগে রাজহাঁসগুলো একটা ডাক দিতেই খামারে চলে আসে।
আব্দুল আজিজের ছেলে রহেদুল জানায়, করোনার পর বাবার চাকরি চলে যায়। তিনি হতাশ হয়ে বাড়িতে ফেরেন। তখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। স্কুলও বন্ধ হয়ে গেছে। তখন থেকে বাবার কাজে আমি সঙ্গি হয়ে যাই। তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আজকে আমরা একটু সুখের মুখ দেখছি। খামারটি চালু হওয়ার পর পারিবারিক খরচ বাদে আমরা মাসে প্রায় পনেরো হাজার টাকার মতো আয় করছি। আমাদের ইচ্ছে খামারটাকে আরও বড় পরিসরে করার।
রাজারহাট আরডিআরএস এর টেকনিক্যাল অফিসার সৌরভ সরকার জানান, রাজারহাটে অনেক খামারি রাজহাঁস পালন করছেন কিন্তু তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন না। কারণ বাড়তি খাবার দেওয়ার পরও হাঁসগুলো সেভাবে বৃদ্ধি হয় না। সময়ও বেশিদিন লাগে। সেদিক থেকে পেকিং রাজহাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। অল্প খাবারে দ্রুত বাড়ন্ত হয়। খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু। ফলে এই রাজহাঁস পালনে খামারিরা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন।
আরডিআরএস রংপুর বিভাগের সমন্বয়কারী বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, পল্লী-কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বল্প সময়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন পেকিং রাজহাঁস পালন এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।