।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
প্রতিবছর বন্যার ভাঙনে ব্রহ্মপুত্রে ভেসে যায় শতশত পরিবারের সুখ-স্বপ্ন-সাধ ও সাজানো সংসার। কান্দে মন, বুক ভাসে চোখের জলে। দুঃখ যেন তাদের সম্বল। বছর আসে বছর যায় সুখের ঘর বাঁধে নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষ। তারাও স্বপ্ন দেখে মনে অনেক সাধ জাগে। চেষ্টাও চালিয়ে যায় সুখে থাকার জন্য। কিন্তু সেই সুখ-স্বপ্ন আর সাধ প্রতিবছর কেড়ে নিতে হানা দেয় ভাঙন। সুখের মুখ দেখার আগে ভাঙনের সাথে সাথে ব্রহ্মপুত্রের স্রোত ও ভাঙন ভেসে নেয় তাদের সাজানো ঘর সংসার, রেখে দেয় দুঃখ-কষ্ট আর হতাশা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ব্রহ্মপুত্রের থাবা দিতে শুরু করেছে সুখ-শান্তির সংসার তছনছ করে ভেসে নিতে। বাড়িয়ে দিচ্ছে দুঃখ-কষ্ট মনের যন্ত্রনা সাথে বিভিন্ন দুর্যোগ ও আতঙ্ক।
জানা যায়, চিলমারীর এক দিকে ব্রহ্মপুত্র অন্য দিকে তিস্তা। বাড়তে শুরু করেছে পানি সেই সাথে চরাঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন ঠেকাতে চিলমারী ইউনিয়নে গাছের বান্ডালের মাধ্যমে কাজ শুরু করলেও অষ্টমীর চর, নয়ারহাট ইউনিয়ন রক্ষা পাচ্ছেনা ভাঙন থেকে। যতই পানি বাড়ছে ভাঙন আতঙ্ক বেড়েই চলছে চরাঞ্চলসহ জোড়গাছ এবং কাঁচকোল বাঁধ এলাকায়। এদিকে কাঁচকোল বাঁধ ও ডানতীর রক্ষা প্রকল্প এলাকায় ধসসহ ভাঙনের মুখে রয়েছে বাঁধ ও রক্ষা প্রকল্প। ডানতীর রক্ষা প্রকল্প ও বাঁধ ভেঙে গেলে ভাঙনের মুখে পড়বে উপজেলা সদর। তবে কাঁচকোল এলাকায় বাঁধে ধস এবং ভাঙনের কারণ হিসাবে বালু উত্তোলনকেই দায়ি করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে একটি মহল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করার ফলে আজ উপজেলা সদরসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম ভাঙনের মুখে এবং সেই সাথে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ ও ডানতীর রক্ষা প্রকল্পও হুমকির মুখে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে ফলে চরাঞ্চলে ফসলি জমি ভাঙতে শুরু করেছে এবং চরাঞ্চল মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এছাড়াও তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করায় চিলমারীর পাত্রখাতা এলাকায় ভাঙন আতঙ্ক বাড়ছে। পানি যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীর তীরবর্তী মানুষের মাঝে ততই বাড়ছে ভাঙন আতঙ্ক।
স্থানীয়রা জানান, এই সময় ভাঙনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে পরিকল্পনা মোতাবেক বান্ডাল তৈরি করে জিও ব্যাগ ফেলানো গেলে ভাঙন থেকে এলাকাবাসী রক্ষা পেতে পারে এবং সরকারি সম্পদও রক্ষা পাবে। ভাঙন ঠেকাতে সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় প্রতিবছর শতশত পরিবারের সুখ-স্বপ্ন-সাধ ভেসে নেয় নদী ভাঙন। ব্রহ্মপুত্রের থাবায় শতশত পরিবার জমিদার থেকে আজ পথের ফকির। এক সময় যেসব মানুষের বাড়িতে শতশত মানুষ কাজকর্ম করে দিন পার করেছিল আজ ব্রহ্মপুত্রের থাবায় নিয়তি তাদের বানিয়েছে নিঃস্ব। নিঃস্ব এই মানুষগুলোকে থাকতে হয় রিলিফের ভরসায়। কর্ম না থাকায় রিলিফের ওপর ভরাসার সাথে সাথে কর্মক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে এই মানুষগুলো। খেটে খাওয়া ও দিনমজুররা পড়ে চরম বিপাকে। প্রতিনিয়ত নদীর তীরবর্তী মানুষজন আতঙ্কে দিন কাটায়।
এই অঞ্চলের মানুষের বড় সমস্যা ভাঙন স্বীকার করে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট বিপ্লব হাসান পলাশ বলেন, সরকারের দায়িত্বরত ব্যাক্তিদের সাখে সবসময় যোগাযোগ করতেছি আশা করি ভালো ফলাফল আসবে। এছাড়াও নদী ভাঙনের শিকার পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশাপাশি জমিসহ ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। আশা করি সরকারের সহযোগিতায় তারা আবারও ফিরে পাবে সুখ দেখবে শান্তির ঠিকানা। এছাড়াও পরিকল্পনা মোতাবেক ভাঙন ঠেকাতে কাজ করা হবে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/জুন/০১/২৪