।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
রাজিবপুরে পাওনা টাকা ফেরত না দেয়ায় গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে লজ্জায় শুক্রবার (২৪ মে) স্বামী-স্ত্রী একসাথে বিষপান করেন। এতে স্বামী জাহাঙ্গীর বেঁচে গেলেও বুধবার (২৯ মে) মারা যান স্ত্রী আশা খাতুন। এ ঘটনার ৫২ ঘণ্টা কেটে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্তরা।
মৃত্যুর আগে আশা খাতুনের দেওয়া একটি অডিও ক্লিপের মাধ্যমে জানা যায়, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে জহির মন্ডলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আলীর কাছ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা ধার নেন জাহাঙ্গীর-আশা দম্পতি। ধারের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদার টাকা চেয়ে বসে। কিন্তু তাৎক্ষণিক পাওনা টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন আশা খাতুন এবং বলেন, বর্তমানে টাকা নেই আর কিছুদিন পরে টাকাটা পরিশোধ করবো।
কিন্তু পাওনাদার তার টাকাটা পুনরায় চেয়ে বসে এবং টাকা না দিতে পারলে আশা খাতুনকে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। ভুক্তভোগীর পরিবার অভাবগ্রস্থ হওয়ায় পাওনাদারের অবৈধ প্রস্তাব মেনে নেন তিনি এবং জয়নালের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে জয়নাল তার সাথে শুক্কুর আলী নামের একজনকে সাথে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্ক করে। পরবর্তীতে তারা দুজন সোলেমান নামের আরেকজনকে সাথে নিয়ে এসে শারীরিক সম্পর্ক করেন এবং সোলেমান গোপনে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে। পরে তাকেও যদি শারীরিক সম্পর্ক করতে না দেয় তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সেও শারীরিক সম্পর্ক করে।
এভাবে প্রতিনিয়ত বাদী আশা খাতুনের রুমে ঢুকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ফলে তিনি অতিষ্ট হয়ে যান এবং তার স্বামী জাহাঙ্গীর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা লোকমুখে শোনেন। শুধু তাই নয়, বিছানার তোশকে রক্ত দেখতে পেয়ে স্ত্রীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সে তার স্বামীর কাছে সব খুলে বলে। স্বামী তার স্ত্রীর মুখে সবকিছু শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করেন। পরে স্বামী-স্ত্রী মানুষকে মুখ দেখানোর লজ্জায় ঘরে থাকা ফসলে দেওয়া কীটনাশক (বিষ) শুক্রবার (২৪ মে) দুপুর আনুমানিক ২টায় স্বামী-স্ত্রী মিলে পান করেন। পরবর্তীতে তাদের দুজনকেই স্থানীয়রা উদ্ধার করে রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদানের পর জাহাঙ্গীর কিছুটা সুস্থ হলেও আশা খাতুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
সেখানে তিন দিন চিকিৎসা গ্রহণের পর আশা খাতুনের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সেখান থেকেও তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে মময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে তারা সোমবার (২৮ মে) রাতে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বুধবার (২৯ মে) দুপুর আনুমানিক ২টায় আশা খাতুন তার নিজ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় বুধবার রাজিবপুর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়। ধর্ষণের ঘটনায় আশা খাতুনের পরিবারের কেউ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেনি।
আশা খাতুনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন তিনটি সাদা (ফাঁকা) স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। সাদা স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই যে আমরা দুই পক্ষকে মিল করে মাটি দিবে যাতে আর কোনো সমস্যা না হয়। এটি বলেই সাদা স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নেয়।
পুলিশ বলছে আমরা বিষয়টির নিখুঁত তদন্ত করছি। প্রমাণ পেলে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
//নিউজ/রাজিবপুর//সুজন-মাহমুদ/মে/৩১/২৪