।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
ফুলবাড়ীর নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ও দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বালারহাটের রাস্তার ইট তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে হাট ইজারাদার ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন মো. মহির উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম। তাঁরা দুজনেই নাওডাঙ্গা ইউপি সদস্য। এছাড়াও নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাছন আলী এই ইট বিক্রির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও হাট ইজারাদার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বালারহাট বাজার হাটশেট মেরামত ও হাটের রাস্তা পাকাকরণের জন্য প্রায় ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফুলবাড়ীর বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন হাটশেট ও হাটের রাস্তার ঠিকাদারি কাজ পান। চলতি মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাটের রাস্তা পাকাকরণ কাজ শুরু করার পর গত সোমবার(২২ এপ্রিল) নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও দুই ইউপি সদস্য ইউনিয়ন উন্নয়নের নামে বাজারের কাঁচা বাজারের হেয়ারিং রাস্তা থেকে প্রায় ২০ হাজার ইট তুলে নিয়ে যান। দুইদিন পর দুই হাজার ইট খোয়া করে ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কারের জন্য ইউপি মাঠে রেখে বাকি ইট বিক্রি করেন।
বালারহাট বাজার হাট ইজারাদার মো. আনিছুর রহমান বাবু বলেন, হাট উন্নয়ন কাজ শুরু হলে ইউপি চেয়ারম্যান বাজারের ২০০ ফিট কাঁচা বাজার হেয়ারিং রাস্তা থেকে প্রায় ২০ হাজার ইট তুলে নিয়ে যান। এসময় আমি চেয়ারম্যানকে ইট তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি হাট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে দাবী করে ইট ইউনিয়নের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার হবে বলে জানান। কিন্তু দুইদিন পর ইউনিয়নে গিয়ে দেখি হাটের রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া ইট থেকে ২ হাজার ইট খোয়া করে বাকি ইট দুইজন ইউপি সদস্যের যোকসাজশে তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন।
বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সহিদার রহমান ওরফে কাজল বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সাথে চুক্তির সময় হাটের হেয়ারিং রাস্তা থেকে ইট তুলে নেওয়ার কথা উল্লেখ্য ছিল না। কাজ শুরু করার পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান এসে হাটের রাস্তার ইট তুলে নিয়ে যান। এতে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন ওই গর্তে প্রায় ২০ হাজার টাকার বালু ফেলতে হবে। আমি চেয়ারম্যানকে ইট তুলে নিয়ে যেতে বাঁধা দিলে ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে জোড় করে সব ইট নিয়ে যান।
এ বিষয়ে চার নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হাটশেট নির্মাণ ও হাটের রাস্তা পাকাকরণের জন্য ঠিকাদার হেয়ারিং রাস্তার ইট না তুলে বালুদিয়ে ঢেকে দিচ্ছিলো। এতো টাকার সম্পদ মাটির নিচে চাপা পড়তেছে দেখে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউন ঘরের সংস্কারের জন্য প্রায় ১২ হাজার ইট তুলে নিয়ে এসেছিলাম। সেগুউলো বিক্রি করা হয়নি। খোয়া করে ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে রাখা হয়েছে।’
তিন নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. মহির উদ্দিন বলেন, ঠিকাদারের লোকজন বালুদিয়ে ইট ঢেকে দিচ্ছিলো তাই আমরা সেখান থেকে ১৪ হাজার ইট তুলে নিয়ে এসেছি। এজন্য ঠিকাদারকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। তুলে আনা ইট থেকে আত হাজার ইট খোয়া করা হয়েছে। বাকি ইট বিক্রি করে ঠিকাদারের টাকা ও খোয়া ভাঙ্গা মিস্ত্রীকে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রায় আট হাজার টাকা এখনো চেয়ারম্যানের কাছে রয়েছে। সেটি দিয়ে সিমেন্ট কিনে ইউনিয়নের সংস্কার কাজ করা হবে।
সরকারি সম্পত্তি নিলাম না করে বা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া নেওয়ার বিষয়ে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী বলেন, ‘হাটের ইট ইউনিয়নের কেউ তুলে নেয়নি। ঠিকাদার ইট কী করেছে সেটা ঠিকাদার বলতে পারবে। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না বলে তিনি ফোন কেটে দেন।’
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, ‘হাটের ইট কোন ইউপি চেয়ারম্যান তুলে নিলাম ব্যতীয় বিক্রি করতে পারে না। বালারহাট বাজারের ইট তুলে বিক্রির বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
//নিউজ/ফুলবাড়ী//নূর-নবী/এপ্রিল/২৯/২৪