।। নিউজ ডেস্ক ।।
ভূরুঙ্গামারীতে নির্মাণাধীন একটি ব্রিজের স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজে দ্বন্দ্বের জেরে উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলীকে ফোরম্যানসহ ঠিকাদারের লোকজন লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের সুবলপাড় বাজার রাঙ্গালীকুটি সড়ক ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে টেন্ডার হওয়া ৮২ মিটারের গার্ডার ব্রিজটির কাজ পেয়েছে যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসিএল প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড। পরে এটি সাব কন্ট্রাক্ট নেয় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্রিজটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। ব্রিজটি উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের সুবলের বাজার ও রাঙ্গালীকুটি বাজারের মাঝখানে নির্মাণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজে তদারকিতে আসেন ভূরুঙ্গামারী উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমান, ওয়ার্ক এ্যাসিসটেন্স শ্যামল কুমার কুন্ড, তপন কুমার সরকার ও মিলন মিয়া। স্ল্যাব সংযোগের জন্য ১০ মিলিমিটার এঙ্গেল নির্ধারণ করা হলেও ৬ মিলিমিটার পাত দিয়ে ঢালাই কাজ শুরু করায় স্থানীয় মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক রানা ও এলাকাবাসী কাজে বাঁধা দেন। তারা ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করার পরামর্শ দেন। এ সময় উপসহকারী প্রকৌশলী বাজারে ১০ মিলিমিটার এঙ্গেলের সরবরাহ না থাকায় ঘন করে ৬ মিলিমিটার এঙ্গেল ব্যবহার করে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেন। পরে স্থানীয় এক লোকের অনুরোধে ডাইভারশন সড়কের কাজ দেখতে যান উপসহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমান। সেখানে ফোরম্যান সবুজ মিয়া ও তার লোকজন তার ওপর হামলা করলে তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে পরেন। তখন মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক রানা তাকে নিজস্ব মোটরসাইকেলে সোনাহাট বাজারে গিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে নিয়ে যান।
অভিযুক্ত ফোরম্যান সবুজ মিয়া মারপিটের ঘটনার কথা অস্বীকার করে জানান, একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে মাত্র। তিনি অভিযোগ করেন এর আগেও জয়েন্টের এঙ্গেল না থাকায় ওই প্রকৌশলী কাজ বন্ধ করে দেন। সেদিনও আমাদের ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আজ ইঞ্জিনিয়ারের সরবরাহকৃত ৬ মিলিমিটার এঙ্গেল দিয়ে কাজ শুরু করা হয়। তিনি এঙ্গেলের পুরুত্ব কম দেওয়ায় স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের ভুলে বারবার কাজ বন্ধ রাখলে আমাদের অনেক টাকার ক্ষতি হয়। জনগণকে বুঝিয়ে ঢালাই শুরু করতে তাদের পথ আটকানো হয়েছিল মাত্র। আমাদের ক্ষতি করায় ঠিকাদারের পরামর্শে থানায় এসেছি মামালা করতে।
বিষয়টি নিয়ে মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক রানা জানান, ঈদের আগে এঙ্গেল ছাড়াই ঠিকাদারের ম্যানেজার জুয়েল কাজ শুরু করলে উপসহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমান ঘটনাস্থলে এসে কাজ বন্ধ করে দেন। শুনেছি আজ আতাউর রহমান নিজেই এঙ্গেল কিনে এনেছেন। এঙ্গেলের পুরুত্ব ১০ মিলিমিটারের স্থলে ৬ মিলিমিটার ব্যবহার করায় এলাকাবাসী কাজ আটকে দেয়। পরে ডাইভারশন সড়কে ফোরম্যান সবুজ মিয়া ও মিস্ত্রিরা তার ওপর হামলা করেছে বলে তিনি আমাকে জানান। ডাইভারশন সড়কে তিনি অসুস্থ হয়ে পরায় তাকে আমার মোটরসাইকেলে করে সোনাহাট বাজারে গিয়ে ডাক্তার দেখাই। তিনি ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগে ভুগছেন বলে ডাক্তারকে জানিয়েছেন। পরে তিনি কিছুটা সুস্থ হলে তার পরিচিত জনৈক জালাল ব্যাপারী তাকে মোটরসাইকেলে করে ভূরুঙ্গামারীতে বাসায় নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমানের মোবাইল বন্ধ থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার দুষ্টু প্রকৃতির। কাজ শুরু করার পরও একদিনও তিনি সাইটে আসেন নি। ফোন করলে নানান টালবাহানা করেন। এর আগে ঈদের সময় এঙ্গেল ছাড়াই তারা ঢালাইয়ের কাজ করলে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর থেকে তারা কোন রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এদিকে মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা নিজেদের উদ্যোগে এঙ্গেল সরবরাহ করি। যাতে দ্রুত ব্রিজের কাজ শেষ করা যায়। বাজারে ১০ মি.মি. এঙ্গেল না পাওয়ায় ৬ মি.মি. এঙ্গেল কেনা হয়। তাদেরকে ঘন করে এঙ্গেল জয়েন্ট করতে পরামর্শ দেয়া হয়। তারা ইচ্ছেকৃতভাবে স্থানীয় লোকজনকে উস্কে দিয়েছে। উপসহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমানকে অতর্কিতভাবে পেছন থেকে আক্রমণ করা হয়। তাকে কিলঘুষি মারা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের ওপর হামলা করায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে কচাকাটা থানার অফিসার ইনচার্জ বিশ্বদেব রায় জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। উপসহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমানের মোটরসাইকেলটি সেখানে ছিল। সেটি থানায় নিয়ে এসে অফিসের কর্মচারী মিলন মিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় মামলা করেনি। মামলা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।