জরীফ উদ্দীন:
রমনা মেইল চলছে পার্বতীপুর জংশন থেকে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত ছোট বড় খ্যাত অখ্যাত ১৬ টি স্টেশন কে পিছনে ফেলে। পিছনে ফেলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুলকলেজ, হাটবাজার, নদীনালা ইত্যাদি। ট্রেনের কামরাগুলো নাহারী ঘরের মত। বসতে হয় গাদাগাদি করে, অনেক সময় বসারও স্থান হয় না। থাকতে হয় বাদুড়ের মত ঝুলে। সেখানে চলে সব কিছুই। হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের আলাপ, চাপাবাজি, গালগল্প, গান-বাজনা, জুয়াবাজি কিংবা মানুষের অর্থ লুটে খাওয়া।
হরেক রকম মানুষের আসা যাওয়া রমনা মেইলে কেউ উঠে কেউ নামে তার ইয়ত্তা নেই। যাত্রীদের টিকেট না কাটলেও সমস্যা নেই। চেকারের হাতে টিকেটের হাফ ভাড়া কিংবা তার অর্ধেক দিলে হয়ে যায়। তাও দেওয়া ঠিক নয় অনেকে মনে করেন। এই মনে করা মানুষগুলো হঠাৎ একদিন পরে বিপদে। কুড়িগ্রাম নতুন স্টেশনে বসে মোবাইল চেকিং। সেখানেও ঘটে অদ্ভুদ কিছু ঘটনা। সত্যি বলতে কি! এই লাইনে ট্রেন আসে দেরিতে চলে গরুর গাড়ির মত এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যায় আবু রায়হান’র ‘রমনা মেইল’ উপন্যাসে। হয়ত আপনি কোন দিন রমনা মেইলে চড়েন নি। কিন্তু বইটা পড়লে চোখ বন্ধ করলেই ঘুরে আসবেন মনিরুলের মত খালা বাড়ি বদর গঞ্জ থেকে সোজা চিলমারীর রমনা স্টেশন। ট্রেনে দেখা মিলবে হকার থেকে শুরু করে ফকির, বাটপার কিংবা কিছু নিরহ ভালো মানুষের সাথে। ট্রেনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুনতে হবে গল্প, দেখতে হবে গোপালের সাক্ষীরর মতো বিভিন্ন ঘটনা আর জমা হবে অভিজ্ঞতা এবং ট্রেনের চলমান কিংবা নিভৃতে ঘটে যাওয়া উত্তর বঙ্গের নানা ঘটনা। উপন্যাসের নায়ক মনিরুল মুনির এক সাদাসিধে বালক। তার চলার আর স্মৃতি কথা নিয়ে চলে উপন্যাস শেষ অবধি। যদিও কিশোর উপন্যাস তারপরও উপন্যাসিক কিন্তু প্রেমহীন নন। প্রথমে খালাতো বোন নিভাকে মনে হবে মনিরের বিপরীত প্রধান চরিত্র। ট্রেন চলতে চলতে তা আর মনেই থাকে না। উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে কুড়িগ্রামে দেখা মেলে একটি মেয়ের। মেয়েটি দেখতে মুনিরের খালাতো বোন নিভার মতই। চোখাচোখি করতে করতে আসে বালাবাড়ি পর্যন্ত। মুনিরের তরুণ মনের অবচেতনে তৈরি করে তার সাথে এক সংলাপ। নিজেই মেয়েটির নাম দেয় নিশি। মেয়েটি নেমে গেলে কেমন উদাস হয়ে যায় মুনির। লেখক একজন মোসলমান হয়েও তুলে ধরেন খুবই সতর্কতায় মুনিরের চিন্তায় দুর্গাপুর স্টেশন থেকে পাঁচপীর স্টেশনের নামকরণের চিন্তাটি। স্থানের ‘নাম বদল করলেই কি হিন্দু বা মুসলিম হওয়া যায় না কি!’ যার মধ্য দিয়ে উদরতা ফুটে উঠে। ট্রেন রমনা স্টেশন থেকে আবারো ফিরে যাচ্ছে যেখান থেকে এসেছিল। উপন্যাসটির পাতা উল্টাতেই মন কেড়ে নেয়। শুরুর কথা।
সবমিলে একটি অসাধারণ উপন্যাস।