।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
পৃথিবী জুড়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত যেসব অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ধানের উৎপাদন এবং যেসব দেশে প্রধান খাবার হিসেবে থাকে ভাত, মূলত সেসব দেশে পানিতে ভাত ভিজিয়ে খাওয়ার সংস্কৃতি লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব বাংলা নববর্ষে পান্তা ভাত নিয়ে প্রতিবছরে ব্যাপক আলোচনা হতে দেখা যায়। তবে পান্তা ভাত মানবদেহের জন্য কতটা উপকারী বা পান্তার অপকারিতা কি কি? আবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পান্তা ভাত ভালো না খারাপ। এসব বিষয়ে জানতে পান্তা ভাতের উপরে গবেষণা চালিয়েছেন এক দল বিজ্ঞানী, যা ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত হয়।
কৃষি জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুমিতা বড়ুয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তা ভাতে নানা ধরণের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। যেমন- আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, ফসফরাসসহ ভিটামিন বি জাতীয় উপাদান।
মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, তারা দেখেছেন সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে এসব পুষ্টিদায়ক পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। একটি উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে তৈরি পান্তা ভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম। একই ভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম, সেখানে পান্তা ভাতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫০ মিলিগ্রাম।
তিনি আরও বলেন, “ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যে এন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর আছে সেটা আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের মতো পুষ্টিকর পদার্থকে বেঁধে রাখে। ফলে ভাত খাওয়ার পরেও মানুষের শরীর এসব গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু ফারমেন্টেশনের কারণে পান্তা ভাতের ফাইটেট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখন পুষ্টিকর পদার্থগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়লে আমাদের শরীর সেগুলো গ্রহণ করতে পারে”।
চলুন জেনে নেয়া যাক পান্তা ভাতের উপকারিতাঃ-
★ পান্তা ভাতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিকর পদার্থ। যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে
★ পান্তা ভাতে ভরপুর থাকা আয়রন পদার্থ দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে
★ শরীরের হাড়গুলোকে শক্ত রাখতে সহায়তা করা ক্যালসিয়াম ও শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করা ম্যাগনেসিয়াম পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে
★ গবেষণায় জানা গেছে, পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে মুক্ত রাখে
★ বিটা-সিটোস্টেরল ও মেটাবলাইটস কোলেস্টোরেল কমাতেও ব্যাপক সাহায্য করে।
★ পান্তা ভাতে থাকা আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
★ পান্তা ভাতে রয়েছে ল্যাকটিক এসিড নামক ব্যাকটেরিয়া, যা স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ কার্যকরী।
★ গরমের হাত থেকে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে পান্তা ভাত খাওয়া ভালো
উল্লেখ্য, গবেষণাটিতে পান্তা ভাতের কোনো খারাপ দিক পাওয়া যায় নি। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পান্তা ভাত খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর তা জানার চেষ্টা চলমান রয়েছে। এছাড়া অধ্যাপক মধুমিতা বড়ুয়া বলেছেন, ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয় এবং সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে ও ঘুম পেতে পারে। পান্তা ভাত যদি পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা না হয়, তাহলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে এবং সেই ভাত কেউ খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।