।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
জটিল স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যার অন্যতম একটি রোগ হলো অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার। বর্তমান বিশ্বে শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেড়ে যাওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে বহুগুণে। অটিজম একটা জন্মগত সমস্যা এবং এর লক্ষণসমূহ এক থেকে ৩ বছরের মধ্যে শিশুর মাঝে প্রকাশ পায়। এছাড়া শিশুর বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন ধাপ যেমন- ভাষাগত দক্ষতা, বুদ্ধি খাটিয়ে সমস্যার সমাধান করা, সামাজিক দক্ষতা ইত্যাদি স্বাভাবিক বিকাশগুলোতে কোনও অস্বাভাবিকতা চোখে পরলে, তবে সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হওয়াটা খুবই জরুরী।
সাধারণত অটিস্টিক শিশুরা চারপাশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা নিজস্ব একটা জগত তৈরি করে। এ জগতে তাদের মনোজগত ও আচরণ স্বাভাবিক হয় না। মনোবিকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন ও বংশগতির অস্বাভাবিকতা বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
শিশুর অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমস্যায় সচেতন ও কোন কোন লক্ষণ শিশুর মধ্যে দেখলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে সে ব্যাপারে ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক ফারিহা রহমান বলেন, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর একদম প্রথম লক্ষণ হচ্ছে রেসপন্স। শিশু কারওর ডাকে সাড়া দিচ্ছে কি না, সাড়া দিলেও সেটা সঙ্গে সঙ্গে নাকি অনেক দেরিতে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অটিজম জন্মগত সমস্যা, অর্থাৎ শিশু মায়ের পেট থেকেই অটিজমের বৈশিষ্ট্য সঙ্গে নিয়ে আসে। এরপর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলো আসতে আসতে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়।
চলুন জেনে নেয়া যাক অটিজমে ভুগে থাকা শিশুর কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষণঃ-
⇛ চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারা
⇛ ৯ মাস বয়সী বা তার আগে শিশুর নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া বা হাসি-কান্নার অনুভূতি প্রকাশ না করা
⇛ ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো বোল না বলা
⇛ ১৬ মাসের মধ্যে কোনও একটি শব্দ বলতে না পারা
⇛ ২৪ মাস বয়সের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারা
⇛ ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারার পর আবার ভুলে যাওয়া
⇛ সামাজিক আচরণ করতে অক্ষম
⇛ অন্যের বলা কথা মুখে বার বার বলতে থাকা
⇛ কোনো কিছু স্পর্শ করার ব্যাপারে কম বা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাতে আগ্রহী
⇛ শিশু নিজেই নিজেকে আঘাত করা
⇛ স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে হঠাৎ করে উত্তেজিত হওয়া
উল্লেখ্য, ছোট থেকেই শিশুর দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের। তবে উপরোক্ত লক্ষণ বা শিশুর আচরণে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া স্পিচ থেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, পুষ্টিবিদ, চাইল্ড ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে ধাপে ধাপে শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।