।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
সুকৌশলে চুরি ও ভৌতিক বিলে পল্লী বিদ্যুতের কাছে অসহায়, হয়রানিসহ জিম্মি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার গ্রাহক। কে দেখবে এই ভোগান্তির কারণ। বছরের পর বছর থেকে জিম্মি হয়ে থাকছে গ্রাহক। হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হয়ে তা নিয়ে বলতে গেলেই নানা ভয়ভীতিসহ নেমে আসছে মামলার ভয়ও। চিলমারীতে বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভৌতিক বিল আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। ভৌতিক বিল কাঁধে চাপিয়ে দেয়ায় প্রায় হাজার হাজার গ্রাহক চরমভাবে ভোগান্তিতে পড়েছেন। অপরদিকে সময়মতো বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ কাটাসহ নানা হয়রানি ও ভোগান্তিতে গ্রাহক।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চিলমারী জোনাল অফিসের আওতায় প্রায় ৫৩ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছে। প্রায়ই বিচ্ছিন্নভাবে অনেক গ্রাহকের বিলে নানা রকম অসঙ্গতি দেখা যায় বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। বিগত সময়ে বিদ্যুৎ বিলে বিভিন্ন অসঙ্গতি দেখা দিলেও মার্চ মাসের বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে বিলে শতভাগ ভৌতিক বিল দেয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ।
গ্রাহকদের অভিযোগ, মার্চ মাসের বিলে ১ম থেকে ৬ষ্ঠ স্লাব পর্যন্ত বিল, ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া ও ভ্যাটসহ সকল অংকের যোগ ফলে কোনো মিল নেই অর্থাৎ মোট যোগ ফলে টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিলের সময় ভৌতিক বিল তৈরি করে অথচ যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা অব্যবস্থাপনা দূর করতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। মিটারে বর্তমান রিডিংয়ের সাথে মিল না থাকা, বিলের সঙ্গে ২-৩ মাসের পরিশোধিত বকেয়া বিল সংযুক্ত করাসহ বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বিলের যোগফল না মিলিয়ে বিল বেশি নেয়ায় গ্রামের সহজ-সরল কৃষক, দিনমজুররা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন উপজেলার সবুজপাড়া এলাকার মোঃ রেজাউল মন্ডলের ৯৯২৯৮৬২৭ নং মিটারের বিলে দেখা গেছে, তার ১ ম স্লাবে ৫.২৬ টাকা হারে ৭৫ ওয়াটে ৩৯৪.৫০ টাকা, ২য় স্লাব ৭.২০ টাকা দরে ১২৫ও ওয়াটে ৯০০ টাকা, ৩য় স্লাব ৭.৫৯ টাকা দরে ১৫ ওয়াটে ১১৩.৮৫ টাকা, ডিমান্ড চার্জ ৮৪ টাকা, মিটার ভাড়া ১০ টাকা ও ভ্যাট ৮৪ টাকা মিলে মোট ১ হাজার ৫৮৬ টাকা হওয়ার কথা। সেখানে যোগফল করা হয়েছে ১ হাজার ৭৭১ টাকা। ওই গ্রাহকের বিলে অলিখিতভাবে ১৮৫ টাকা বেশ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। একই ভাবে ১৭০৩৪২২০১৬ নং মিটারে ১ হাজার ৭০৪ টাকার স্থলে ১ হাজার ৮৫২ টাকা লিখে ১৪৮ টাকা বেশি, ০০১৭৪৯৫৮ নং মিটারে ৫৫ টাকার স্থলে ৬৬ টাকা লিখে ১১ টাকা বেশি, ৫৫৮৮৭৪৪ নং মিটারে ২৯৯ টাকার স্থলে ৩১৭ টাকা লিখে ১৮ টাকা বেশি নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। শত শত গ্রাহকের মুখে একই অভিযোগের কথা শোনা যায়।
বাবু মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আঃ মজিদ, সাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহক বলেন, বিদ্যুৎ বিলের নামে গ্রাহকদের ধোঁকা দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। হঠাৎ অলিখিতভাবে বিদ্যুৎ বিল বেশি নিচ্ছে। এমন ভৌতিক বিল এর আগে কখনো হয়নি। আমাদের মতো সহজ-সরল ও নিম্ন আয়ের লোকেরা কাজ রেখে বিল ঠিক করতে অফিসে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বলেন, সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট ছাড়াও বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতি মাসে ১০ টাকা হারে মিটার ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিকট টাকা দিয়ে মিটার কিনে নেওয়ার পরও মাসিক হারে আজীবন মিটার ভাড়া দিতে হবে কেন। এসব বিষয়ে সঠিকভাবে তদারকি করারও কেউ নেই।
চিলমারী জোনাল অফিসের বিলিং সুপারভাইজার সালমা খাতুন বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারিভাবে বিদ্যুতের বিল বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুরাতন বিলে বর্ধিত টাকা বসানোর জায়গা না থাকায় অলিখিতভাবে বিল বেশি নেয়া হয়েছে। এটি শুধু এ মাসেই হবে, অন্য মাসে আর হবে না।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চিলমারী জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, বিলের কাগজ যেভাবে আছে ওই ভাবে যোগ করলে মিলবে না কিন্তু সফটওয়্যারে টাকা ঠিক আছে। হিসাব না মিললে অফিসে আসেন দেখিয়ে দিব।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/মার্চ/৩১/২৪