।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর ধু ধু বালুচরগুলো এখন সবুজের সমারোহ। নদ-নদীর বুকে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদ বদলে দিয়েছে প্রকৃতির রূপ। বদলে গেছে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান।
উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি, হাতিয়া এবং তিস্তা নদী বেষ্টিত দলদলিয়া, থেতরাই, গুনাইগাছ ও বজরা ইউনিয়ন। রাক্ষুসি তিস্তা নদী বর্তমানে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র নদের। নদ-নদীগুলো খনন এবং ড্রেজিং না করায় দিনের পর দিন পলি জমে ভরে উঠেছে। পরিণত হয়েছে ধু ধু বালুচরে। নদ-নদীর ভাঙনে বাপ-দাদার বসতভিটা ছেড়ে অন্য জেলায় চলে যায় অনেকেই। আবার অনেক পরিবার ফিরে এসে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার বালুচরে শুরু করেছে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদ।
বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে-ফিরে দেখা গেছে, সবুজের বৈচিত্র্য রূপ। বিশেষ করে আলু, মরিচ, বেগুন, গাজর, গম, ভুট্টা, তিল, তিসি, কাউন, পেঁয়াজ, রসুন, লাউ, টমেটো, সিম, বাদাম, মুলা, ইরি-বোরো, নানাবিধ শাকসবজি চাষাবাদে ভরে উঠেছে ধু ধু বালুচরে।
থেতরাই ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্ৰামের কৃষক হোসেন আলী জানান, দলদলিয়া ইউনিয়নে তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা অর্জুনের চরে এক একর জমিতে পেঁয়াজ, এক একর জমিতে বাদাম, ৬০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা, ৪০ শতাংশ জমিতে আলু ও ১০ শতাংশ জমিতে রসুন চাষাবাদ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। আশা করছি খরচ বাদে ৩ লাখ টাকা ঘরে আসবে।
একই গ্ৰামের কৃষক সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে তরিতরকারির আবাদে খরচ কম লাভ বেশি। তাই তিনি এবারে এক একর জমিতে পেঁয়াজ, ৭০ শতাংশ জমিতে বাদাম ও ৪০ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন খরচ বাদে লাভ আসবে ২ লাখ টাকা। একই ধরণের কথা জানালেন কৃষক আব্দুল মালেক। তাদের অভিযোগ কৃষি বিভাগ থেকে কোনো প্রকার বীজ সার সহায়তা তাদের দেয়া হয় না। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তার পছন্দের লোকদের এসব দিয়ে থাকেন। যাদেরকে বীজ সার সহায়তা দেয়া হয় তাদের অনেকেই আবাদ না করে এসব বিক্রি করে দেয়।
ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সাহেবের আলগা ইউনিয়নের নামাজের চরের কৃষক মহসিন আলী বলেন, স্ত্রী-পুত্র-পরিজন নিয়ে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদ করে আসছি। এতে করে দিনমজুর নিতে হচ্ছে না। যার কারণে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি হচ্ছে।
এদিকে তিস্তা নদী বালুচরে পরিণত হওয়ায় জেলে এবং নৌ-শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। অনেকেই বাপ-দাদার পেশা মাঝি-মাল্লা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।
বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার জানান, বর্তমানে চরাঞ্চলে নানাবিধ ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। চরের কৃষকরা ফসল চাষাবাদ করে সংসার পরিচালনা করছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে মিথ্যা এবং তাদের বানানো।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন জানান, ব্রহ্মপুত্র এবং তিস্তার চরাঞ্চলে এখন সকল প্রকার ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। পলি জমে উর্বর হয়ে ওঠা বালুচরে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এখন উঁচু এলাকার চেয়ে চরাঞ্চলে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ ভালো হচ্ছে।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/মার্চ/৩০/২৪