মামুন রিপন, বনভোজন থেকে ফিরেঃ
জীবনের প্রতিটি দিনই যেন নানা চমক নিয়ে হাজির হয়। ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তার ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু এদিনের চমক ছিলো একটু অন্যরকম। ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম সমিতি গত শনিবার ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করে। এ পরিবারের একজন নবাগত সদস্য হিসেবে আমিও সুযোগ পাই পিকনিকে যাওয়ার। কুড়িগ্রাম সমিতিতে আমার জীবনের ২য় পিকনিক, তাই আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষা ছিলো প্রচুর। পিকনিকের আগে থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল সবার মধ্যে। পিকনিকের দিন কি অনুষ্ঠান হবে, কে কি পারফর্ম করবে এসব নিয়ে আলোচনায় ছিলো সবাই। অবশেষে এলো সেই পিকনিকের দিন। পিকনিকের আগের রাতে ঘুম আসছিলো না, বারবার বন্ধুদের আর পরিবারের সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলাম যেন ভোরে ঘুম থেকে ডেকে দেয়।
আগেরবারের মত এবারও পিকনিকের ভেন্যু ছিল ন্যাশনাল পার্ক, গাজীপুর। সকাল থেকেই বাস রেডি করা ছিলো। প্রতিটি ব্যাচের জন্য পৃথক বাস। ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেই সংসদ ভবন দৌড়। ধীরে ধীরে সবাই আসতে লাগলো। সবাই নিজ নিজ ব্যাচের বাসে উঠে বসল। সকাল ৮.৩০ টায় আমাদের যাত্রা শুরু হলো। যাত্রা পথ অনেক দীর্ঘ, তাই যাত্রা পথে আনন্দ করবার জন্য প্রতিটি বাসেই সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা ছিলো। নেচে গেয়ে আনন্দ করে সবাই চলতে লাগলো। বাসের ভিতরে গানের তালে তালে বন্ধুরা সবাই মিলে নাচার যে কি আনন্দ বুঝেছি সেদিন। গাজীপুর গিয়ে পৌঁছতে আমাদের প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে যায়। সব ব্যাচের জন্যই পৃথক কটেজের ব্যবস্থা ছিলো । রিসোর্টে পৌঁছে একটু বিশ্রাম নিয়ে শুরু হয় ঘোরাঘুরি ও ছবি তোলা। এসময় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠিত হয় ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ, স্ট্যাম্পে বল নিক্ষেপ, ছোট বাচ্চাদের দৌড়, বয়স্ক লোকদের দৌড়, মহিলাদের দৌড়, ইত্যাদি খেলা।
তারপরই শুরু হয় ভোজন পর্ব। সবাই মিলে একসাথে খাওয়া, সত্যিই এক অন্যরকম অনুভূতি। মনে হচ্ছিল এ যেন এক গোটা পরিবার। সেই পরিবারের সদস্য হতে পেরেও বারবার ধন্য মনে হচ্ছিল নিজেকে।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব ব্যাচেরই কিছু না কিছু পারফর্ম্যান্স ছিলো। গান, যেমন খুশি তেমন সাজ, নাচ কিছুই বাদ যায় নি। ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাজুর গানগুলো ছিলো অসাধারণ। নাচগুলোও দর্শকদের মন কেড়ে নেয়। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় আকাঙ্ক্ষিত র্যাফেল ড্র। কিভাবে যে পুরো দিনটি চলে গেল বুঝতেই পারি নি। উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি নুরে হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, রুহুল আমিন এমপি, ভূমি সংস্থার বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান, দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, মেজর জেনারেল (অবঃ) আমসা আমিন, গণকমিটির ঢাকা মহানগরের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ডঃ আইনুল ইসলাম, মেজর (অবঃ) আব্দুস সালাম, ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হক, রাজনীতিক আব্দুল খালেক, ঢাকাস্থ ব্লুমিং নিটওয়্যার লিমিটেডের পরিচালক মাজহারুল ইসলাম মাজু, উলিপুর ডট কমের সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রুপম রাজ্জাক, রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সমন্নয়ক আঃ ছোবহান জুয়েল, গণকমিটির ঢাকা মহানগর শাখার সাধারন সম্পাদক শাখাওয়াত স্বপন, কুড়িগ্রাম সমিতির আহবায়ক মিজান তালুকদার ও মহাসচিব সাইদুল আবেদীন ডলার সহ আরো অনেকে। সবাই মিলে আনন্দময় মূহূর্ত পার করেছি পুরোটা দিন। বিকেল গড়িয়ে যাওয়ার সাথে আসতে থাকে ফিরে আসবার প্রস্তুতি। কিন্তু সত্যই মন চাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিলো আরো কিছুটা সময় থেকে যাই। ফিরে আসা মানেই আবার সেই ব্যস্ততা। তারপরও ফিরে তো আসতেই হবে। সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টা নাগাদ ফিরতি যাত্রা শুরু হলো।
কুড়িগ্রাম সমিতির সবার স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে এ দিনটি। হয়তো সোনালি ফ্রেমে আবদ্ধ থাকবে সারাটি জীবন। পিকনিকের আয়োজক সমিতির আহবায়ক মিজান তালুকদার ও মহাসচিব সাইদুল আবেদীন ডলার সহ সকল ভাইয়া আপুকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সকলের সাবলীল অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পিকনিক ও অনুষ্ঠান আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল। সকলকে ধন্যবাদ, এমন সুন্দর একটি দিন উপহার দেয়ার জন্য।
লেখকঃ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মামুন-অর-রশিদ (রিপন)
যুগ্ন সাধারন সম্পাদক,
রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, ঢাকা মহানগর শাখা।
আংশিক সম্পাদনায়ঃ প্রকৌশলী রূপম রাজ্জাক – সম্পাদক, উলিপুর ডট কম