।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুরে রবিশষ্যের চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুল। উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া ও জলবায়ু তেলবীজ ফসল সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই উপজেলা কৃষি বিভাগ ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা তিন জন বন্ধুকে সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এক একর জমিতে এই ফুল আবাদ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
এখন বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরাঞ্চলে অবহেলিত জমিতে শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখী। বিশাল এলাকা জুড়ে চাষ করা হয়েছে এই ফুল। পরম যত্নে বেড়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুলের প্রতিটি গাছ। হলুদ ফুল কৃষকের আশার আলো হয়ে তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে। চৈত্রের প্রখর রোদে বাতাসে দোল খাচ্ছে মনকাড়া সূর্যমুখী ফুলগুলো। সূর্যমুখীর হলুদ আভায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। দৃষ্টিনন্দন এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সূর্যমুখী ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল। উপজেলায় চরাঞ্চলের এক একর পতিত জমিতে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করেছেন।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডেবা এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা তিন বন্ধু শাহাদত আলী, ওসমান আলী ও জিয়াউর রহমান চরাঞ্চলে ৬০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ভূট্টা ও পেঁয়াজ চাষ শুরু করেন। পরবর্তীতে ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তারা ১ একর পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ শুরু করেন।
তরুণ উদ্যোক্তা শাহাদত আলী জানান, আমরা তিন বন্ধু মিলে চরাঞ্চলে ভূট্টা ও পেঁয়াজ চাষ শুরু করি। অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার ও কীটনাশক কম লাগে এবং রোগ বলাই কম। খুব বেশি পরিচর্যাও করতে হয় না। স্বল্প খরচেই আমরা ১ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর প্রথম চাষ করেছি তবে বাজারজাত কেমন করে করব সেই বিষয়ে চিন্তিত আছি।
মিজানুর রহমান, মহু বাদশা, সঞ্জু মোল্লাসহ স্থানীয় অনেক কৃষক জানান, চরে সূর্যমুখীর ফলন হবে আমরা ভাবতেও পারি নাই। ফলন দেখে ভালো লাগছে। আগামীতে আমরাও সূর্যমুখী চাষ করব।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদুল করিম বলেন, সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের নিকট জনপ্রিয় করে তুলতে এ অঞ্চলের পতিত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বৃদ্ধিকল্পে তাদের তিন বন্ধুকে জন প্রতি ১ কেজি সূর্যমুখী বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি পটাশ সার সরকার থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়। সূর্যমুখী চাষে লাভের প্রত্যাশা বেশি। ফুল থেকে তেল, খৈল ও গাছ থেকে জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৭-৮ মণ বীজ উৎপাদন হয়। প্রতি মণ বীজের বাজার মূল্য চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। আমরা সরেজমিনে পাশে থেকে তাদেরকে সূর্যমুখী আবাদে উৎসাহ ও পরামর্শ দিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, লাভজনক ফসল সূর্যমুখী। আগামীতে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। কৃষকদের এসব তেল প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করণে ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কথা বলে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/মার্চ/২৩/২৪